বিসর্জন
বহু কষ্টে ডাক ছাড়ি             চলেছে গোরুর গাড়ি,
            ঝিনি ঝিনি ঘণ্টা তারি বাজে।
কেহ দ্রুত কেহ ধীরে;              কেহ যায় নতশিরে,
            কেহ যায় বুক ফুলাইয়া,
কেহ জীর্ণ টাট্টু চড়ি                   চলিয়াছে তড়বড়ি
            দুই ধারে দু-পা দুলাইয়া।

 

পরপারে গায়ে গায়                   অভ্রভেদী মহাকায়
            স্তব্ধচ্ছায় বট-অশত্থেরা,
স্নিগ্ধ বন-অঙ্কে তারি                সুপ্তপ্রায় সারি সারি
            কুঁড়েগুলি বেড়া দিয়ে ঘেরা—
বিহঙ্গে মানবে মিলি              আছে হোথা নিরিবিলি,
            ঘনশ্যাম পল্লবের ঘর—
সন্ধ্যাবেলা হোথা হতে              ভেসে আসে বায়ুস্রোতে
            গ্রামের বিচিত্র গীতস্বর।

 

পূর্বপ্রান্তে বনশিরে               সূর্যোদয় ধীরে ধীরে,
            চারি দিকে পাখির কূজন।
শঙ্খঘণ্টা ক্ষণপরে                    দূর মন্দিরের ঘরে
            প্রচারিছে শিবের পূজন।
যে প্রত্যুষে মধুমাছি              বাহিরায় মধু যাচি
            কুসুমকুঞ্জের দ্বারে দ্বারে
সেই ভোরবেলা আমি                মানসকুহরে নামি
            আয়োজন করি লিখিবারে।

 

লিখিতে লিখিতে মাঝে             পাখি-গান কানে বাজে,
            মনে আনে কাল পুরাতন—
ওই গান, ওই ছবি,                তরুশিরে রাঙা রবি
            ওরা প্রকৃতির নিত্যধন।
আদিকবি বাল্মীকিরে                 এই সমীরণ ধীরে
            ভক্তিভরে করেছে বীজন,
ওই মায়াচিত্রবৎ                   তরুলতা ছায়াপথ