বিসর্জন
আসে যায় নয়নের ’পরে।
আজ সব হল
সারা, বিদায় লয়েছে তারা,
নূতন বেঁধেছে ঘরবাড়ি—
এখন স্বাধীন
বলে
বাহিরে এসেছে চলে
অন্তরের পিতৃগৃহ ছাড়ি।
তাই এতদিন
পরে
আজি নিজমূর্তি ধরে
প্রবাসের বিরহবেদনা,
তোদের কাছেতে
যেতে
তোদিকে নিকটে পেতে
জাগিতেছে একান্ত বাসনা।
সম্মুখে দাঁড়াব
যবে
‘কী এনেছ’ বলি সবে
যদ্যপি শুধাস হাসিমুখ,
খাতাখানি বের
করে
বলিব ‘এ পাতা ভরে
আনিয়াছি প্রবাসের সুখ’!
সেই ছবি মনে
আসে—
টেবিলের চারি পাশে
গুটিকত চৌকি টেনে আনি,
শুধু জন
দুই-তিন,
ঊর্ধ্বে জ্বলে কেরোসিন,
কেদারায় বসি ঠাকুরানী।
দক্ষিণের দ্বার
দিয়ে
বায়ু আসে গান নিয়ে,
কেঁপে কেঁপে উঠে দীপশিখা।
খাতা হাতে সুর
করে
অবাধে যেতেছি প’ড়ে,
কেহ নাই করিবারে টীকা।
ঘণ্টা বাজে, বাড়ে
রাত,
ফুরায় ব’য়ের পাত,
বাহিরে নিস্তব্ধ চারি ধার—
তোদের নয়নে
জল
করে আসে ছলছল্
শুনিয়া কাহিনী করুণার।
তাই দেখে শুতে
যাই,
আনন্দের শেষ নাই,
কাটে রাত্রি স্বপ্ন-রচনায়—
মনে মনে প্রাণ ভরি
অমরতা
লাভ করি
নীরব সে সমালোচনায়।