রাজা ও রানী

বিক্রমদেব।  চাহ না আমার প্রেম?

    সুমিত্রা।                        কিছু চাই নাথ,

সব নহে। স্থান দিয়ো হৃদয়ের পাশে,

সমস্ত হৃদয় তুমি দিয়ো না আমারে।

বিক্রমদেব।  আজো রমণীর মন নারিনু বুঝিতে।

    সুমিত্রা।  তোমরা পুরুষ, দৃঢ় তরুর মতন

আপনি অটল রবে আপনার 'পরে

স্বতন্ত্র উন্নত, তবে তো আশ্রয় পাব

আমরা লতার মতো তোমাদের শাখে।

তোমরা সকল মন দিয়ে ফেল যদি

কে রহিবে আমাদের ভালোবাসা নিতে,

কে রহিবে বহিবারে সংসারের ভার?

তোমরা রহিবে কিছু স্নেহময়, কিছু

উদাসীন, কিছু মুক্ত, কিছু বা জড়িত —

সহস্র পাখির গৃহ, পান্থের বিশ্রাম,

তপ্ত ধরণীর ছায়া, মেঘের বান্ধব,

ঝটিকার প্রতিদ্বন্দ্বী, লতার আশ্রয়।

বিক্রমদেব।  কথা দূর করো প্রিয়ে! হেরো সন্ধ্যাবেলা

মৌনপ্রেমসুখে সুপ্ত বিহঙ্গের নীড়,

নীরব কাকলি। তবে মোরা কেন দোঁহে

কথার উপরে কথা করি বরিষন?

অধর অধরে বসি প্রহরীর মতো

চপল কথার দ্বার রাখুক রুধিয়া।

 

কঞ্চুকীর প্রবেশ

   কঞ্চুকী।  এখনি দর্শনপ্রার্থী মন্ত্রী মহাশয়,

গুরুতর রাজকার্য, বিলম্ব সহে না।

বিক্রমদেব।  ধিক্‌ তুমি! ধিক্‌ মন্ত্রী! ধিক্‌ রাজকার্য!

রাজ্য রসাতলে যাক মন্ত্রী লয়ে সাথে।

[ কঞ্চুকীর প্রস্থান

   সুমিত্রা।  যাও, নাথ, যাও!