রাজা ও রানী
দেবদত্তের প্রবেশ

  দেবদত্ত।  জয় হোক।

   সুমিত্রা।         ঠাকুর, কিসের কোলাহল?

  দেবদত্ত।  শোন কেন মাতঃ! শুনিলেই কোলাহল।

সুখে থাকো, রুদ্ধ করো কান। অন্তঃপুরে

সেথাও কি পশে কোলাহল? শান্তি নেই

সেখানেও? বল তো এখনি সৈন্য লয়ে

তাড়া করে নিয়ে যাই পথ হতে পথে

জীর্ণচীর ক্ষুধিত তৃষিত কোলাহল।

   সুমিত্রা।  বলো শীঘ্র কী হয়েছে।

  দেবদত্ত।                           কিছু না, কিছু না।

শুধু ক্ষুধা, হীন ক্ষুধা, দরিদ্রের ক্ষুধা।

অভদ্র অসভ্য যত বর্বরের দল

মরিছে চীৎকার করি ক্ষুধার তাড়নে

কর্কশ ভাষায়। রাজকুঞ্জে ভয়ে মৌন

কোকিল পাপিয়া যত।

   সুমিত্রা।                         আহা, কে ক্ষুধিত?

  দেবদত্ত। অভাগ্যের দুরদৃষ্ট। দীন প্রজা যত

চিরদিন কেটে গেছে অর্ধাশনে যার

আজো তার অনশন হল না অভ্যাস,

এমনি আশ্চর্য!

   সুমিত্রা।                        হে ঠাকুর, এ কী শুনি!

ধান্যপূর্ণ বসুন্ধরা, তবু প্রজা কাঁদে

অনাহারে?

  দেবদত্ত।                 ধান্য তার বসুন্ধরা যার।

দরিদ্রের নহে বসুন্ধরা। এরা শুধু

যজ্ঞভূমে কুক্কুরের মতো লোলজিহ্বা

একপাশে পড়ে থাকে, পায় ভাগ্যক্রমে

কভু যষ্টি, উচ্ছিষ্ট কখনো। বেঁচে যায়

দয়া হয় যদি, নহে তো কাঁদিয়া ফেরে

পথপ্রান্তে মরিবার তরে।