রাজা ও রানী

বাহিরে বাঁশির রবে ছেড়ে যায় ঘর।

ভালোবাসে সুখে দুখে,

ব্যথা সহে হাসিমুখে,

মরণেরে করে চির জীবননির্ভর।


কুমারসেন। কেন এ করুণ সুর? কেন দুঃখগান?

বিষণ্ন নয়ন কেন?

     ইলা।                     এ কি দুঃখগান?

শোনায় গভীর সুখ দুঃখের মতন

উদার উদাস। সুখদুঃখ ছেড়ে দিয়ে

আত্মবিসর্জন করি রমণীর সুখ।

কুমারসেন। পৃথিবী করিব বশ তোমার এ প্রেমে।

আনন্দে জীবন মোর উঠে উচ্ছ্বসিয়া

বিশ্বমাঝে। শ্রান্তিহীন কর্মসুখতরে

ধায় হিয়া। চিরকীর্তি করিয়া অর্জন

তোমারে করিব তার অধিষ্ঠাত্রী দেবী।

বিরলে বিলাসে ব'সে এ অগাধ প্রেম

পারি নে করিতে ভোগ অলসের মতো।

     ইলা।  ওই দেখো রাশি রাশি মেঘ উঠে আসে

উপত্যকা হতে, ঘিরিতে পর্বতশৃঙ্গ—

সৃষ্টির বিচিত্র লেখা মুছিয়া ফেলিতে।

কুমারসেন। দক্ষিণে চাহিয়া দেখো — অস্তরবিকরে

সুবর্ণসমুদ্রসম সমতলভূমি

গেছে চলে নিরুদ্দেশ কোন্‌ বিশ্বপানে।

শস্যক্ষেত্র, বনরাজি, নদী, লোকালয়

অস্পষ্ট সকলি — যেন স্বর্ণ চিত্রপটে

শুধু নানা বর্ণসমাবেশ, চিত্ররেখা

এখনো ফোটে নি। যেন আকাঙ্ক্ষা আমারই

শৈল-অন্তরাল ছেড়ে ধরণীর পানে

চলেছে বিস্তৃত হয়ে হৃদয়ে বহিয়া

কল্পনার স্বর্ণলেখা ছায়াস্ফুট ছবি।

আহা, হোথা কত দেশ, নব দৃশ্য কত,