বিসর্জন

যেমন    একলা মধুপ ধেয়ে যায়

        কেবল    ফুলের সৌরভে।

জয়সিংহ।   কেবলি একেলা! দক্ষিণ বাতাস যদি

বন্ধ হয়ে যায়, ফুলের সৌরভ যদি

নাহি আসে, দশ দিক জেগে ওঠে যদি

দশটি সন্দেহ-সম, তখন কোথায়

সুখ, কোথা পথ? জান কি একেলা কারে

বলে?

অপর্ণা।      জানি। যবে বসে আছি ভরা মনে —

দিতে চাই, নিতে কেহ নাই!

জয়সিংহ।                     সৃজনের

আগে দেবতা যেমন একা! তাই বটে!

তাই বটে! মনে হয় এ জীবন বড়ো

বেশি আছে — যত বড়ো তত শূন্য, তত

আবশ্যকহীন।

অপর্ণা।                জয়সিংহ, তুমি বুঝি

একা! তাই দেখিয়াছি, কাঙাল যে জন

তাহারো কাঙাল তুমি। যে তোমার সব

নিতে পারে, তারে তুমি খুঁজিতেছ যেন।

ভ্রমিতেছ দীনদুঃখী সকলের দ্বারে।

এতদিন ভিক্ষা মেগে ফিরিতেছি — কত

লোক দেখি, কত মুখপানে চাই, লোকে

ভাবে শুধু বুঝি ভিক্ষাতরে — দূর হতে

দেয় তাই মুষ্টিভিক্ষা ক্ষুদ্র দয়াভরে।

এত দয়া পাই নে কোথাও — যাহা পেয়ে

আপনার দৈন্য আর মনে নাহি পড়ে।

জয়সিংহ।     যথার্থ যে দাতা, আপনি নামিয়া আসে

দানরূপে দরিদ্রের পানে, ভূমিতলে।

যেমন আকাশ হতে বৃষ্টিরূপে মেঘ

নেমে আসে মরুভূমে — দেবী নেমে আসে

মানবী হইয়া, যারে ভালোবাসি তার

মুখে। দরিদ্র ও দাতা, দেবতা মানব