বিসর্জন

সকলে। জয় মা!

গণেশ। আর ভয় নেই!

কানু। ওরে, সেই দক্ষিণদ'র মানুষগুলো এখন গেল কোথায়?

গণেশ। মায়ের ঐশ্বর্য বেটাদের সইল না। তারা ভেগেছে।

হারু। কেবল মায়ের ঐশ্বর্য নয়, আমি তাদের এমনি শাসিয়ে দিয়েছি, তারা আর এমুখো হবে না। বুঝলে অক্রূরদা, আমার মামাতো ভাই দফাদারের নাম করবা-মাত্র তাদের মুখ চুন হয়ে গেল।

অক্রূর। আমাদের নিতাই সেদিন তাদের খুব কড়া দুটো কথা শুনিয়ে দিয়েছিল। ওই যার সেই ছুঁচোপারা মুখ সেই বেটা তেড়ে উত্তর দিতে এসেছিল ; আমাদের নিতাই বললে, ‘ওরে, তোরা দক্ষিণদেশে থাকিস, তোরা উত্তরের কী জানিস? উত্তর দিতে এসেছিস, উত্তরের জানিস কী? ' শুনে আমরা হেসে কে কার গায়ে পড়ি।

গণেশ। ইদিকে ঐ ভালোমানুষটি, কিন্তু নিতাইয়ের সঙ্গে কথায় আঁটবার জো নেই।

হারু। নিতাই আমার পিসে হয়।

কানু। শোনো একবার কথা শোনো। নিতাই আবার তোর পিসে হল কবে?

হারু। তোমরা আমার সকল কথাই ধরতে আরম্ভ করেছ! আচ্ছা, পিসে নয় তো পিসে নয়। তাতে তোমার সুখটা কী হল? আমার হল না বলে কি তোমারই পিসে হল?

রঘুপতি ও জয়সিংহের প্রবেশ

 

রঘুপতি। শুনলুম সৈন্য আসছে। জয়সিংহ, অস্ত্র নিয়ে তুমি এইখানে দাঁড়াও। তোরা আয়, তোরা এইখানে দাঁড়া! মন্দিরের দ্বার আগলাতে হবে। আমি তোদের অস্ত্র এনে দিচ্ছি।

গণেশ। অস্ত্র কেন ঠাকুর?

রঘুপতি। মায়ের পুজো বন্ধ করবার জন্য রাজার সৈন্য আসছে।

হারু। সৈন্য আসছে! প্রভু, তবে আমরা প্রণাম হই।

কানু। আমরা কজনা, সৈন্য এলে কী করতে পারব?

হারু। করতে সবই পারি — কিন্তু সৈন্য এলে এখেনে জায়গা হবে কোথায়! লড়াই তো পরের কথা, এখানে দাঁড়াব কোন্‌খানে!

অক্রূর। তোর কথা রেখে দে। দেখছিস নে প্রভু রাগে কাঁপছেন? — তা ঠাকুর, অনুমতি করেন তো আমাদের দলবল সমস্ত ডেকে নিয়ে আসি।

হারু। সেই ভালো। অমনি আমার মামাতো ভাইকে ডেকে আনি। কিন্তু, আর একটুও বিলম্ব করা উচিত নয়।

[ সকলের প্রস্থানোদ্যম

সরোষে

রঘুপতি।     দাঁড়া তোরা!

করজোড়ে

জয়সিংহ।     যেতে দাও প্রভু — প্রাণভয়ে ভীত এরা