গ্রাম্যসাহিত্য
চরিত্র সম্বন্ধে, তাহা সাধারণ্যে প্রকাশযোগ্য নহে। সুতরাং আমরা উদ্‌ধৃত করিতে ক্ষান্ত হইলাম। ব্যাপারটা কেবল এইখানেই শেষ হইল না; স্ত্রীর রাগ যতদূর পর্যন্ত যাইতে পারে, অর্থাৎ বাপের বাড়ি পর্যন্ত, তাহা গেল।
কোলে করি কার্তিক হাঁটায়ে লম্বোদরে
ক্রোধ করি হরের গৌরী গেলা বাপের ঘরে॥

এ দিকে শিব তাঁহার সংকল্পিত দাম্পত্য-প্রহসনের নেপথ্যবিধান শুরু করিলেন–

বিশ্বকর্মা এনে করান শঙ্খের গঠন।

শঙ্খ লইয়া শাঁখারি সাজিয়া বাহির হইলেন-

দুইবাহু শঙ্খ নিলেন নাম শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
কপটভাবে হিমালয়ে তলাসে ফেরেন॥
হাতে শূলী কাঁখে থলি শম্ভু ফেরে গলি গলি।
শঙ্খ নিবি শঙ্খ নিবি এই কথাটি ব’লে॥
সখীসঙ্গে বসে গৌরী আছে কুতূহলে।
শঙ্খ দেখি শঙ্খ দেখি এই কথাটি বলে॥
গৌরীকে দেখায়ে শাঁখারি শঙ্খ বার ক’ল্ল।
শঙ্খের উপরে যেন চন্দ্রের উদয় হল॥
মণি মুকুতা-প্রবাল-গাঁথা মাণিক্যের ঝুরি।
নব ঝলকে ঝলছে যেন ইন্দ্রের বিজুলি॥

দেবী খুশি হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন–

শাঁখারি ভালো এনেছ শঙ্খ।
শঙ্খের কত নিবে তঙ্ক॥

দেবীর লুব্ধভাব দেখিয়া চতুর শাঁখারি প্রথমে দর-দামের কথা কিছুই আলোচনা করিল না; কহিল-
                                 গৌরী,     ব্রহ্মলোক, বৈকুণ্ঠ, হরের কৈলাস, এ তো সবাই কয়।

বুঝে দিলেই হয়।
হস্ত ধুয়ে পরো শঙ্খ, দেরি উচিত নয়॥

শাঁখারি মুখে মুখে হরের স্থাবর সম্পত্তির যেরূপ ফর্দ দিল তাহাতে শাঁখাজোরা বিশেষ সস্তায় যাইবে মহাদেবীর এমন মনে করা উচিত ছিল না।

গৌরী আর মহাদেবে কথা হল দড়।
সকল সখী বলে দুর্গা শঙ্খ চেয়ে পরো॥
কেউ দিলেন তেল গামছা কেউ জলের বাটি।
দেবের ঊরুতে হস্ত থুয়ে বসলেন পার্বতী॥
দয়াল শিব বলেন, শঙ্খ আমার কথাটি ধরো–
দুর্গার হাতে গিয়ে শঙ্খ বজ্র হয়ে থাকো॥