গ্রাম্যসাহিত্য
শিলে নাহি ভেঙো শঙ্খ, খড়েগ নাহি ভাঙো।
দুর্গার সহিত করেন বাক্যের তরঙ্গ॥
এ কথা শুনিয়া মাতা মনে মনে হাসে।
শঙ্খ পরান জগৎপিতা মনের হরষে॥
শাঁখারি ভালো দিলে শঙ্খ মানায়ে।
ভাণ্ডার ভেঙে দেইগে তঙ্ক, লওগে গনিয়ে॥

এতক্ষণে শাঁখারি সময় বুঝিয়া কহিল–

আমি যদি তোমার শঙ্খের লব তঙ্ক।
জ্ঞেয়াত-মাঝারে মোর রহিবে কলঙ্ক॥

ইহারা যে বংশের শাঁখারি তাঁহাদের কুলাচার স্বতন্ত্র; তাঁহাদের বিষয়বুদ্ধি কিছুমাত্র নাই; টাকাকড়ি সম্বন্ধে বড়ো নিস্পৃহ; ইঁহারা যাঁহাকে শাঁখা পরান তাঁহাকে পাইলেই মূল্যের আর কোনোপ্রকার দাবি রাখেন না। ব্যবসায়টি অতি উত্তম।

কেমন কথা কও শাঁখারি কেমন কথা কও।
মানুষ বুঝিয়া শাঁখারি এ-সব কথা কও॥

শাঁখারি কহিল–

না করো বড়াই দুর্গা না করো বড়াই।
সকল তত্ত্ব জানি আমি এই বালকের ঠাঁই॥
তোমার পতি ভাঙড় শিব তা তো আমি জানি।
নিতি নিতি প্রতি ঘরে ভিক্ষা মাগেন তিনি॥
ভস্মমাখা তায় ভুজঙ্গ মাথে অঙ্গে।
নিরবধি ফেরেন তিনি ভূত-পেরেতের সঙ্গে॥

ইহাকেই বলে শোধ তোলা! নিজের সম্বন্ধে যে-সকল স্পষ্ট ভাষা মহাদেব সহধর্মিণীরই মুখ হইতে মধ্যে মধ্যে শুনিয়া আসিয়াছেন, অদ্য সুযোগমত সেই সত্য কথাগুলিই গৌরীর কানে তুলিলেন।

এই কথা শুনিয়া মায়ের রোদন বিপরীত।
বাহির করতে চান শঙ্খ না হয় বাহির॥
পাষাণ আনিল চণ্ডী, শঙ্খ না ভাঙিল।
শঙ্খেতে ঠেকিয়া পাষাণ খণ্ড খণ্ড হল॥
কোনোরূপে শঙ্খ যখন না হয় কর্তন।
খড়গ দিয়ে হাত কাটিতে দেবীর গেল মন॥
হস্ত কাটিলে শঙ্খে ভরিবে রুধিরে।
রুধির লাগিলে শঙ্খ নাহি লব ফিরে॥
মেনকা গো মা,
কী কুক্ষণে বাড়াছিলাম পা॥