গ্রাম্যসাহিত্য
মরিব মরিব মা গো হব আত্মঘাতী।
আপনার গলে দিব নরসিংহ কাতি॥

অবশেষে অন্য উপায় না দেখিয়া দুর্গা ধূপদীপনৈবেদ্য লইয়া ধ্যানে বসিলেন।

ধ্যানে পেলেন মহাদেবের চরণ দুখান।

তখন ব্যাপারটা বুঝা গেল, দেবতার কৌতুকের পরিসমাপ্তি হইল।

কোথা বা কন্যা, কোথা বা জামাতা।
সকলই দেখি যেন আপন দেবতা॥

এ যেন ঠিক স্বপ্নেরমতো হইল। নিমেষের মধ্যে-

দুর্গা গেলেন কৈলাসে, শিব গেলেন শ্মশানে।
ভাঙ ধুতুরা বেঁটে দুর্গা বসলেন আসনে।
সন্ধ্যা হলে দুইজনে হলেন একখানে॥

এইখানে চতুর্থ ছত্রের অপেক্ষা না রাখিয়াই ছড়া শেষ হইয়া গেল।

রাধাকৃষ্ণের সম্বন্ধীয় ছড়াগুলির জাতি স্বতন্ত্র। সেখানে বাস্তবিকতার কোঠা পার হইয়া মানসিকতার মধ্যে উত্তীর্ণ হইতে হয়। প্রাত্যহিক ঘটনা, সাংসারিক ব্যাপার, সামাজিক রহস্য সেখানে স্থান পায় না। সেই অপরূপ রাখালের রাজ্য বাঙালি ছড়া রচয়িতা ও শ্রোতাদের মানসরাজ্য।

স্থানে স্থানে ফেরেন রাখাল সঙ্গে কেহ নাই।
ভাণ্ডীবনে ধেনু চরান সুবল কানাই॥
সুবল বলিছে শুন ভাই রে কানাই
আজি তোরে ভাণ্ডীবনবিহারী সাজাই॥

এই সাজাইবার প্রস্তাব মাত্র শুনিয়া নিকুঞ্জে যেখানে যত ফুল ছিল সকলেই আগ্রহে ব্যাকুল হইয়া উঠিল।

কদম্বের পুষ্প বলেন সভা-বিদ্যমানে সাজিয়া
দুলিব আজি গোবিন্দের কানে॥
করবীর পুষ্প বলেন, আমার মর্ম কে বা জানে-
আজ আমায় রাখবেন হরি চূড়ার সাজনে॥
অলক ফুলের কনকদাম বেলফুলের গাঁথনি-
আমার হৃদয়ে শ্যাম দুলাবে চূড়ামণি॥
আনন্দেতে পদ্ম বলেন, তোমরা নানা ফুল
আমায় দেখিলে হবে চিত্ত ব্যাকুল।
চরণতলে থাকি আমি কমল পদ্ম নাম
রাধাকৃষ্ণে একাসনে হেরিব বয়ান॥

কোনো ফুলকেই নিরাশ হইতে হইল না, সেদিন তাহাদের ফুটিয়া ওঠা সার্থক হইল।