গ্রাম্যসাহিত্য

ফুলেরই উড়ানি        ফুলেরই জামাজুরি

সুবল সাজাইলি ভালো।

ফুলেরই পাগ          ফুলেরই পোশাক

সেজেছে বিহারীলাল॥

নানা আভরণ          ফুলেরই ভূষণ

চূড়াতে করবী ফুল।

কপালে কিরীটি          অতি পরিপাটি

পড়েছে চাঁচর চুল॥

এ দিকে কৌতুহলী ভ্রমর-ভ্রমরী ময়ূর-ময়ূরী খঞ্জন-খঞ্জনীর মেলা বসিয়া গেল। যে-সকল পাখির কণ্ঠ আছে তাহারা সুবলের কলানৈপুণ্যের প্রশংসা করিতে লাগিল; কোকিল সস্ত্রীক আসিয়া বলিয়া গেল ‘কিংকিণী কিরীটি অতি পরিপাটি’।

ডাহুক ডাহুকী টিয়া টুয়া পাখি

ঝংকারে উড়িয়া যায়।

তাহারা ঝংকার করিয়া কী কথা বলিল?–

সুবল রাখাল সাজায়েছে ভালো

বিনোদবিহারী রায়।

এ দিকে চাতক-চাতকী শ্যামকে মেঘ ভ্রম করিয়া উড়িয়া উড়িয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া ‘জল দে’ ‘জল দে’ বলিয়া ডাকিয়া বেড়াইতে লাগিল। বনের মধ্যে শাখায় পল্লবে বাতাসে আকাশে ভারি একটা রব পড়িয়া গেল।

কানাই বলিছে, প্রাণের ভাই রে সুবল।

কেমনে সাজালে ভাই বল্‌ দেখি বল্‌॥

কানাই জানেন তাঁহার সাজ সম্পূর্ণ হয় নাই। কোকিল-কোকিলা আর ডাহুক-ডাহুকীরা যাহাই বলুক-না কেন, সুবলের রুচি এবং নৈপুণ্যের প্রশংসা করিবার সময় হয় নাই।

নানা ফুলে সাজালে ভাই, বামে দাও প্যারী।

তবে তো সাজিবে তোর বিনোদবিহারী॥

বৃন্দাবনের সর্বপ্রধান ফুলটিই বাকি ছিল। সেই অভাবটা পশু-পক্ষীদের নজরে না পড়িতে পারে, কিন্তু শ্যামকে যে বাজিতে লাগিল।

কুঞ্জপানে যে দিকে ভাই চেয়ে দেখি আঁখি

সুখময় কুঞ্জবন অন্ধকার দেখি॥

তখন লজ্জিত সুবল কহিল–

এই স্থানে থাকো তুমি নবীন বংশীধারী।

খুঁজিয়া মিলাব আজ কঠিন কিশোরী॥

এ দিকে ললিতা-বিশাখা সখীদের মাঝখানে রাধিকা বসিয়া আছেন।