গ্রাম্যসাহিত্য

সুবলকে দেখিয়া সবই হয়ে হরষিত-

এসো এসো বসো সুবল একি অচরিত॥

সুবল সংবাদ দিল–

মন্দ মন্দ বহিতেছে বসন্তের বা, পত্র পড়ে গলি।

কাঁদিয়া বলেন কৃষ্ণ কোথায় কিশোরী॥

কৃষ্ণের দুরবস্থার কথা শুনিয়া রাধা কাঁদিয়া উঠিয়া কহিলেন–

সাধ করে হার গেঁথেছি সই দিব কার গলে।

ঝাঁপ দিয়ে মরিব আজ যমুনার জলে॥

রাই অনাবশ্যক এইরূপ একটা দুঃসাধ্য দুঃসাহসিক ব্যাপার ঘটাইবার জন্য মুহূর্তের মধ্যে কৃতসংকল্প হইয়া

উঠিলেন। কিন্তু অবশেষে সখীদের সহিত রফা করিয়া বলিলেন–

যেই সাজে আছি আমি এই বৃন্দাবনে

সেই সাজে যাব আমি কৃষ্ণদরশনে॥

দাঁড়া লো দাঁড়া লো সই বলে সহচরী।

ধীরে যাও, ফিরে চাও রাধিকাসুন্দরী।

রাধিকা সখীদের ডাকিয়া বলিলেন–

তোমরা গো পিছে এস মাথে করে দই।
নাথের কুশল হোক, ঝটিৎ এস সই॥

রাধা প্রথম আবেগে যদিও বলিয়াছিলেন যে সাজে আছেন সেই সাজেই যাইবেন, কিন্তু সে প্রতিজ্ঞা রহিল না।

হালিয়া মাথার বেণী বামে বাঁধি চূড়া,
অলকা তিলকা দিয়ে, এঁটে পরে ধড়া।
ধড়ার উপরে তুলে নিলেন সুবর্ণের ঝরা॥
সোনার বিজটা শোভে হাতে তাড়বালা।
গলে শোভে পঞ্চরত্ন তক্তি কণ্ঠমালা॥
চরণে শোভিছে রাইয়ের সোনার নূপুর।
কটিতে কিংকিণী সাজে, বাজিছে মধুর॥
চিন্তা নাই চিন্তা নাই বিশাখা এসে বলে
ধবলীর বৎস একটি তুলে লও কোলে॥

সখীরা সব দধির ভাণ্ড মাথায় এবং রাধিকা ধবলীর এক বাছুর কোলে লইয়া, গোয়ালিনীর দল ব্রজের পথ দিয়া শ্যাম-দরশনে চলিল। কৃষ্ণ তখন রাধিকার রূপ ধ্যান করিতে করিতে অচেতন।

সাক্ষাতে দাঁড়ায়ে রাই বলিতেছে বাণী
কী ভাব পড়িছে মনে শ্যাম গুণমণি।
যে ভাব পড়েছে মনে সেই ভাব আমি॥