মুক্তির উপায়

ষষ্ঠী। জান তো মা, ও কিরকম হো হো করে বেড়াত— কেবল খেলাধুলো, কেবল ঠাট্টাতামাসা। ভয় হত, কোথায় কী করে বসে! তাই তো ওর গলায় একটা নোঙরের পর আর-একটা নোঙর ঝুলিয়ে দিলুম।

পুষ্প। নোঙর বেড়েই চলল, ভারে নৌকো তলিয়ে যাবার জো। আমি তোমাদের পাড়ায় এসেছি হৈমির খবর নেবার জন্যে। শুনলুম, সে তোমার এখানেই আছে।

ষষ্ঠী। হাঁ মা, এতদিন আমি ছিলুম নামেই মামা। তার বিয়ের পর থেকে এই তাকে দেখলুম। বুক জুড়িয়ে গেল তার মধুর স্বভাবে। তারও স্বামী পালিয়েছে। হল কি বলো তো! কন্‌গ্রেসওয়ালারা এর কিছু করে উঠতে পারলে না?

পুষ্প। মহাত্মাজিকে বললে এখনি তিনি মেয়েদের লাগিয়ে দেবেন অসহযোগ আন্দোলনে। দেশে হাতাবেড়ির আওয়াজ একেবারে হবে বন্ধ। গলির মোড়ে খুদু ময়রার দোকানে তেলে-ভাজা ফুলুরি খেয়ে বাবুদের আপিসে ছুটতে হবে— দুদিন বাদেই সিক্‌ লীভের দরখাস্ত।

ষষ্ঠী। ও সর্বনাশ!

পুষ্প। ভয় নেই, মেয়েদের হয়ে আমি মহাত্মাজিকে দরবার জানাব না। বরঞ্চ রবি ঠাকুরকে ধরব, যদি তিনি একটা প্রহসন লিখে দেন।

ষষ্ঠী। কিন্তু, রবি ঠাকুর কি আজকাল লিখতে পারে। আমার শ্যালার কাছে—

পুষ্প। আর বলতে হবে না। কথাটা রাষ্ট্র হয়ে গেছে দেখছি। কিন্তু ভাবনা নেই, লেখন্দাজ ঢের জুটে গেছে। দ্বাদশ আদিত্য বললেই হয়।

ষষ্ঠী। বরঞ্চ লিখতেই যদি হয়, আমি তো মনে করি, আজকাল মেয়েরা যেরকম—

পুষ্প। অসহ্য, অসহ্য। জামা শেমিজ পরার পর থেকে ওদের লজ্জা শরম সব গেছে।

ষষ্ঠী। সেদিন কলকাতায় গিয়েছিলুম; দেখি, মেয়েরা ট্র্যামে বাসে এমনি ভিড় করেছে—

পুষ্প। যে পুরুষ বেচারারা খালি গাড়ি পেলেও নড়তে চায় না। ও কথা যাক্‌গে— মাখনের জন্যে ভেবো না।

ষষ্ঠী। সেই ভালো, তোমার উপরেই ভার রইল।

[ ষষ্ঠীর প্রস্থান
হৈমর প্রবেশ

হৈম। শুনলুম তুমি এসেছ, তাই তাড়াতাড়ি এলুম।

পুষ্প। ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ ছিলেন, তাই গান্ধারী চোখে কাপড় বেঁধে অন্ধ সাজলেন। তোমারও সেই দশা। স্বামী এল বেরিয়ে রাস্তায়, স্ত্রী এল বেরিয়ে মামার বাড়িতে।

হৈম। মন টেঁকে না ভাই, কী করি! তুমি বলেছিলে, হারাধন ফিরিয়ে আনবে।

পুষ্প। একটু সবুর করো— ছিপ ফেলতে হয় সাবধানে; একটা ধরতে যাই, দুটো এসে পড়ে টোপ গিলতে।

হৈম। আমার তো দুটোতে দরকার নেই।

পুষ্প। যেরকম দিন কাল পড়েছে, দুটো একটা বাড়তি হাতে রাখা ভালো। কে জানে কোন্‌টা কখন ফস্‌কে যায়।

হৈম। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। দেখলুম কাগজে তোমার নাম দিয়ে একটা বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে—

পুষ্প। হাঁ, সেটা আমারই কীর্তি।