ছন্দের মাত্রা

তৃণে বিছায়ে | গাঁথো মায়া।

চাঁপা, তোমার আঙিনাতে

ফেরে বাতাস কাছে কাছে ;

আজি ফাগুনে একসাথে

দোলা লাগিয়ো নাচে নাচে॥

বধূ, তোমার দেহলিতে

বর আসিছে দেখিছ কি।

আজি তাহার বাঁশরিতে

হিয়া মিলায়ে দিয়ো, সখি।

৬ + ৩এর ঠাটেও নয় মাত্রাকে সাজানো চলে। যেমন–

সেতারের তারে | ধানশী

মিড়ে মিড়ে উঠে | বাজিয়া।

গোধূলির রাগে | মানসী

সুরে যেন এল | সাজিয়া।

আর-একটা–

তৃতীয়ার চাঁদ | বাঁকা সে,

আপনারে দেখে | ফাঁকা সে।

তারাদের পানে | তাকিয়ে

কার নাম যায় | ডাকিয়ে,

সাথি নাহি পায় | আকাশে।

এতক্ষণ এই যে নয় মাত্রার ছন্দটাকে নিয়ে নয়-ছয় করছিলুম সেটা বাহাদুরি করবার জন্যে নয়, প্রমাণ করবার জন্যে যে এতে বিশেষ বাহাদুরি নেই। ইংরেজি ছন্দে এক্‌সেন্‌টের প্রভাব; সংস্কৃত ছন্দে দীর্ঘহ্রস্বের সুনির্দিষ্ট ভাগ। বাংলায় তা নেই, এইজন্যে লয়ের দাবিরক্ষা ছাড়া বাংলা ছন্দে মাত্রা বাড়িয়ে-কমিয়ে চলার আর-কোনো বাধা নেই। ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ থেকে আরম্ভ করে পাঁচ ছয় সাত আট নয় দশ মাত্রা পর্যন্ত বাংলা ছন্দে আমরা দেখি। এই সুযোগে কেউ বলতে পারেন, এগারো মাত্রার ছন্দ বানিয়ে নতুন কীর্তি স্থাপন করব। আমি বলি, তা করো কিন্তু পুলকিত হোয়ো না, কেননা কাজটা নিতান্তই সহজ। দশ মাত্রার পরে আর-একটা মাত্রা যোগ করা একেবারেই দুঃসাধ্য ব্যাপার নয়। যেমন–

চামেলির ঘনছায়া বিতানে
বনবীণা বেজে ওঠে কী তানে।
স্বপনে মগন সেথা মালিনী
কুসুমমালায় গাঁথা শিথানে॥

অন্যরকমের মাত্রাভাগ করতে চাও সেও কঠিন নয়। যেমন–