ছন্দের মাত্রা
মিলনসুলগনে। কেন বল্‌,
নয়ন করে তোর। ছল্‌ছল্‌।
বিদায়দিনে যবে। ফাটে বুক,
সেদিনো দেখেছি তো। হাসিমুখ।

তারপরে তেরো মাত্রার প্রস্তাবটা শুনতে লাগে খাপছাড়া এবং নতুন, কিন্তু পয়ার থেকে একমাত্রা হরণ করতে দুঃসাহসের দরকার হয় না। সে কাজ অনেকবার করেছি, তা নিয়ে নালিশ ওঠে নি। যথা–

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।

এক মাত্রা যোগ করে পয়ারের জ্ঞাতিবৃদ্ধি করাও খুবই সহজ। যথা–

হে বীর, জীবন দিয়ে মরণেরে জিনিলে,
নিজেরে নিঃস্ব করি বিশ্বেরে কিনিলে।

ষোলো মাত্রার ছন্দ দুর্লভ নয়। অতএব দেখা যাক সতেরো মাত্রা–

নদীতীরে দুই | কূলে কূলে |

কাশবন দুলি | ছে।

পূর্ণিমা তারি | ফুলে ফুলে |

আপনারে ভুলি | ছে।

আঠারো মাত্রার ছন্দ সুপরিচিত। তার পরে উনিশ –

ঘন মেঘভার গগনতলে,

বনে বনে ছায়া তারি,

একাকিনী বসি নয়নজলে

কোন্‌ বিরহিণী নারী।

তারপরে কুড়ি মাত্রার ছন্দ সুপ্রচলিত। একুশ মাত্রা, যথা–

বিচলিত কেন মাধবীশাখা,

মঞ্জরি কাঁপে থরথর।

কোন্‌ কথা তার পাতায় ঢাকা

চুপিচুপি করে মরমর।

তারপরে– আর কাজ নেই, বোধ হয় যথেষ্ট প্রমাণ করতে পেরেছি যে, বাংলায় নতুন ছন্দ তৈরি করতে অসাধারণ নৈপুণ্যের দরকার করে না।

সংস্কৃত ভাষায় নূতন ছন্দ বানানো সহজ নয়, পুরানো ছন্দ রক্ষা করাও কঠিন। যথানিয়মে দীর্ঘহ্রস্ব স্বরের পর্যায় বেঁধে তার সংগীত। বাংলায় সেই দীর্ঘধ্বনিগুলিকে দুইমাত্রায় বিশ্লিষ্ট করে একটা ছন্দ দাঁড় করানো যেতে পারে, কিন্তু তার মধ্যে মূলের মর্যাদা থাকবে না। মন্দাক্রান্তার বাংলা রূপান্তর দেখলেই তা বোঝা যাবে।

যক্ষ সে কোনো জনা    আছিল আনমনা,    সেবার অপরাধে    প্রভুশাপে

হয়েছে বিলয়গত    মহিমা ছিল যত,   বরষকাল যাপে    দুখতাপে।