এবার ফিরাও মোরে

সংসারে সবাই যবে সারাক্ষণ শত কর্মে রত,

তুই শুধু ছিন্নবাধা পলাতক বালকের মতো

মধ্যাহ্নে মাঠের মাঝে একাকী বিষণ্ন তরুচ্ছায়ে

দূরবনগন্ধবহ মন্দগতি ক্লান্ত তপ্তবায়ে

সারাদিন বাজাইলি বাঁশি। ওরে তুই ওঠ্‌ আজি ;

আগুন লেগেছে কোথা? কার শঙ্খ উঠিয়াছে বাজি

জাগাতে জগৎ-জনে? কোথা হতে ধ্বনিছে ক্রন্দনে

শূন্যতল? কোন্‌ অন্ধকারামাঝে জর্জর বন্ধনে

অনাথিনী মাগিছে সহায়? স্ফীতকায় অপমান

অক্ষমের বক্ষ হতে রক্ত শুষি করিতেছে পান

লক্ষ মুখ দিয়া ; বেদনারে করিতেছে পরিহাস

স্বার্থোদ্ধত অবিচার ; সংকুচিত ভীত ক্রীতদাস

লুকাইছে ছদ্মবেশে। ওই যে দাঁড়ায়ে নতশির

মূক সবে — ম্লান মুখে লেখা শুধু শত শতাব্দীর

বেদনার করুণ কাহিনী ; স্কন্ধে যত চাপে ভার

বহি চলে মন্দগতি, যতক্ষণ থাকে প্রাণ তার —

তার পরে সন্তানেরে দিয়ে যায় বংশ বংশ ধরি,

নাহি ভর্ৎসে অদৃষ্টেরে, নাহি নিন্দে দেবতারে স্মরি,

মানবেরে নাহি দেয় দোষ, নাহি জানে অভিমান,

শুধু দুটি অন্ন খুঁটি কোনোমতে কষ্টক্লিষ্ট প্রাণ

রেখে দেয় বাঁচাইয়া। সে অন্ন যখন কেহ কাড়ে,

সে প্রাণে আঘাত দেয় গর্বান্ধ নিষ্ঠুর অত্যাচারে,

নাহি জানে কার দ্বারে দাঁড়াইবে বিচারের আশে —

দরিদ্রের ভগবানে বারেক ডাকিয়া দীর্ঘশ্বাসে

মরে সে নীরবে। এই-সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে

দিতে হবে ভাষা — এই-সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে

ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা — ডাকিয়া বলিতে হবে —

মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে,

যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে,

যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পলাইবে ধেয়ে ;