পলাতকা

          যেদিন ওরা গিনি দিয়ে দেখলে কনের মুখ

                   সেদিন থেকে মঞ্জুলিকার বুক

          প্রতি পলের গোপন কাঁটায় হল রক্তে মাখা।

মায়ের স্নেহ অন্তর্যামী, তার কাছে তো রয় না কিছুই ঢাকা ;

     মায়ের ব্যথা মেয়ের ব্যথা চলতে খেতে শুতে

ঘরের আকাশ প্রতিক্ষণে হানছে যেন বেদনা-বিদ্যুতে।

          অটলতার গভীর গর্ব বাপের মনে জাগে —

                   সুখে দুঃখে দ্বেষে রাগে

            ধর্ম থেকে নড়েন তিনি নাই হেন দৌর্বল্য।

                     তাঁর জীবনের রথের চাকা চলল

                    লোহার বাঁধা রাস্তা দিয়ে প্রতিক্ষণেই,

কোনোমতেই ইঞ্চি - খানেক এদিক-ওদিক একটু হবার জো নেই।

         তিনি বলেন, তাঁর সাধনা বড়োই সুকঠোর,

               আর কিছু নয়, শুধুই মনের জোর,

অষ্টাবক্র জমদগ্নি প্রভৃতি সব ঋষির সঙ্গে তুল্য,

         মেয়েমানুষ বুঝবে না তার মূল্য।

 

 

                   অন্তঃশীলা অশ্রুনদীর নীরব নীরে

                   দুটি নারীর দিন বয়ে যায় ধীরে।

                        অবশেষে বৈশাখে এক রাতে

         মঞ্জুলিকার বিয়ে হল পঞ্চাননের সাথে।

বিদায়বেলায় মেয়েকে বাপ বলে দিলেন মাথায় হস্ত ধরি

          “ হও তুমি সাবিত্রীর মতো এই কামনা করি। ”

 

 

               কিমাশ্চর্যমতঃপরং, বাপের সাধন-জোরে

আশীর্বাদের প্রথম অংশ দু-মাস যেতেই ফলল কেমন করে —

                পঞ্চাননকে ধরল এসে যমে ;

               কিন্তু মেয়ের কপালক্রমে

ফলল না তার শেষের দিকটা, দিলে না যম ফিরে ;

মঞ্জুলিকা বাপের ঘরে ফিরে এল সিঁদুর মুছে শিরে।