প্রণাম

অর্থ কিছু বুঝি নাই, কুড়ায়ে পেয়েছি কবে জানি

নানা - বর্ণে-চিত্র-করা বিচিত্রের নর্মবাঁশিখানি

যাত্রাপথে। সে প্রত্যুষে প্রদোষের আলো অন্ধকার

প্রথম মিলনক্ষণে লভিল পুলক দোঁহাকার

রক্ত-অবগুণ্ঠনচ্ছায়ায়। মহামৌন-পারাবারে

প্রভাতের বাণীবন্যা চঞ্চলি মিলিল শতধারে,

তুলিল হিল্লোলদোল। কত যাত্রী গেল কত পথে

দুর্লভ ধনের লাগি অভ্রভেদী দুর্গম পর্বতে

দুস্তর সাগর উত্তরিয়া। শুধু মোর রাত্রিদিন,

শুধু মোর আনমনে পথ-চলা হল অর্থহীন।

গভীরের স্পর্শ চেয়ে ফিরিয়াছি, তার বেশি কিছু

হয় নি সঞ্চয় করা, অধরার গেছি পিছু পিছু।

আমি শুধু বাঁশরিতে ভরিয়াছি প্রাণের নিশ্বাস,

বিচিত্রের সুরগুলি গ্রন্থি বারে করেছি প্রয়াস

আপনার বীণার তন্তুতে। ফুল ফোটাবার আগে

ফাল্গুনে তরুর মর্মে বেদনার যে স্পন্দন জাগে

আমন্ত্রণ করেছিনু তারে মোর মুগ্ধ রাগিণীতে

উৎকণ্ঠাকম্পিত মূর্ছনায়। ছিন্ন পত্র মোর গীতে

ফেলে গেছে শেষ দীর্ঘশ্বাস। ধরণীর অন্তঃপুরে

রবিরশ্মি নামে যবে, তৃণে তৃণে অঙ্কুরে অঙ্কুরে

যে নিঃশব্দ হুলুধ্বনি দূরে দূরে যায় বিস্তারিয়া

ধূসর যবনি-অন্তরালে, তারে দিনু উৎসারিয়া

এ বাঁশির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ; যে-বিরাট গূঢ় অনুভবে

রজনীর অঙ্গুলিতে অক্ষমালা ফিরিছে নীরবে

আলোকবন্দনামন্ত্র জপে — আমার বাঁশিরে রাখি

আপন বক্ষের ' পরে, তারে আমি পেয়েছি একাকী

হৃদয়কম্পনে মম ; যে বন্দী গোপন গন্ধখানি

কিশোরকোরক - মাঝে স্বপ্নস্বর্গে ফিরিছে সন্ধানি

পূজার নৈবেদ্যডালি, সংশয়িত তাহার বেদনা

সংগ্রহ করেছে গানে আমার বাঁশরি কলস্বনা।