শিলঙের চিঠি
শ্রীমতী শোভনা দেবী ও শ্রীমতী নলিনী দেবী কল্যাণীয়াসু
ছন্দে লেখা একটি চিঠি চেয়েছিলে মোর কাছে,
ভাবছি বসে এই কলমের আর কি তেমন জোর আছে।
তরুণ বেলায় ছিল আমার পদ্য লেখার বদ-অভ্যাস,
মনে ছিল হই বুঝি বা বাল্মীকি কি বেদব্যাস,
কিছু না হোক ‘লঙ্‌ফেলো’দের হব আমি সমান তো—
এখন মাথা ঠাণ্ডা হয়ে হয়েছে সেই ভ্রমান্ত।
এখন শুধু গদ্য লিখি, তাও আবার কদাচিৎ,
আসল ভালো লাগে খাটে থাকতে পড়ে সদা চিৎ।
যা হোক একটা খ্যাতি আছে অনেক দিনের তৈরি সে,
শক্তি এখন কম পড়েছে তাই হয়েছে বৈরী সে;
সেই সেকালের নেশা তবু মনের মধ্যে ফিরছে তো,
নতুন যুগের লোকের কাছে বড়াই রাখার ইচ্ছে তো—
তাই বসেছি ডেস্কে আমার, ডাক দিয়েছি চাকরকে,
‘কলম লে আও, কাগজ লে আও, কালি লে আও, ধাঁ কর্‌কে।’

 

ভাবছি যদি তোমরা দুজন বছর তিরিশ পূর্বেতে
গরজ করে আসতে কাছে, কিছু তবু সুর পেতে।
সেদিন যখন আজকে দিনের বাপ-খুড়ো সব নাবালক,
বর্তমানের সুবুদ্ধিরা প্রায় ছিল সব হাবা লোক,
তখন যদি বলতে আমায় লিখতে পয়ার মিল করে,
লাইনগুলো পোকার মতো বেরোত পিল্‌ পিল্‌ করে।
পঞ্জিকাটা মানো না কি? দিন দেখাটায় লক্ষ নেই?
লগ্নটি সব বইয়ে দিয়ে আজ এসেছ অক্ষণেই।
যা হোক তবু যা পারি তাই জুড়ব কথা ছন্দেতে,
কবিত্ব-ভূত আবার এসে চাপুক আমার স্কন্ধেতে।
শিলঙগিরির বর্ণনা চাও? আচ্ছা না হয় তাই হবে,
উচ্চদরের কাব্যকলা না যদি হয় নাই হবে—
মিল বাঁচাব, মেনে যাব মাত্রা দেবার বিধান তো;