পথ
আমি পথ, দূরে দূরে দেশে দেশে ফিরে ফিরে শেষে
                      দুয়ার-বাহিরে থামি এসে।
ভিতরেতে গাঁথা চলে নানা সূত্রে রচনার ধারা,
আমি পাই ক্ষণে ক্ষণে তারি ছিন্ন অংশ অর্থহারা,
সেথা হতে লেখে মোর ধূলিপটে দীপরশ্মিরেখা
                      অসম্পূর্ণ লেখা।

 

জীবনের সৌধমাঝে কত কক্ষ কত না মহলা,
                      তলার উপরে কত তলা।
আজন্মবিধবা তারি এক প্রান্তে রয়েছি একাকী,
সবার নিকটে থেকে তবুও অসীম দূরে থাকি,
লক্ষ্য নহি উপলক্ষ, দেশ নহি আমি যে উদ্দেশ—
                      মোর নাহি শেষ।

 

উৎসবসভায় যেতে যে পায় আহ্বান-পত্রখানি
                      তাহারে বহন করে আনি।
সে লিপির খণ্ডগুলি মোর বক্ষে উড়ে এসে পড়ে,
ধুলায় করিয়া লুপ্ত তাদের উড়ায়ে দিই ঝড়ে,
আমি মালা গেঁথে চলি শত শত জীর্ণ শতাব্দীর
                      বহু বিস্মৃতির।

 

কেহ যারে নাহি শোনে, সবাই যাহারে বলে ‘জানি’,
                      আমি সেই পুরাতন বাণী।
বণিকের পণ্যযান হে তুমি রাজার জয়রথ,
আমি চলিবার পথ, সেই আমি ভুলিবার পথ,
তীব্রদুঃখ মহাদম্ভ চিহ্ন মুছে গিয়েছে সবাই—
                      কিছু নাই, নাই।

 

কভু সুখে কভু দুঃখে নিয়ে চলি; সুদিন দুর্দিন
                      নাহি বুঝি আমি উদাসীন।