শুচি

রামানন্দ পেলেন গুরুর পদ —

    সারাদিন তার কাটে জপে তপে,

        সন্ধ্যাবেলায় ঠাকুরকে ভোজ্য করেন নিবেদন,

           তার পরে ভাঙে তাঁর উপবাস

               যখন অন্তরে পান ঠাকুরের প্রসাদ।

সেদিন মন্দিরে উৎসব —

    রাজা এলেন, রানী এলেন,

        এলেন পণ্ডিতেরা দূর দূর থেকে,

এলেন নানাচিহ্নধারী নানা সম্প্রদায়ের ভক্তদল।

    সন্ধ্যাবেলায় স্নান শেষ করে

        রামানন্দ নৈবেদ্য দিলেন ঠাকুরের পায়ে —

           প্রসাদ নামল না তাঁর অন্তরে,

               আহার হল না সেদিন।

 

এমনি যখন দুই সন্ধ্যা গেল কেটে,

        হৃদয় রইল শুষ্ক হয়ে,

গুরু বললেন মাটিতে ঠেকিয়ে মাথা,

        ‘ঠাকুর, কী অপরাধ করেছি। '

ঠাকুর বললেন, ‘আমার বাস কি কেবল বৈকুণ্ঠে।

    সেদিন আমার মন্দিরে যারা প্রবেশ পায় নি

        আমার স্পর্শ যে তাদের সর্বাঙ্গে,

           আমারই পাদোদক নিয়ে

প্রাণপ্রবাহিণী বইছে তাদের শিরায়।

    তাদের অপমান আমাকে বেজেছে;

           আজ তোমার হাতের নৈবেদ্য অশুচি। '

 

‘লোকস্থিতি রক্ষা করতে হবে যে প্রভু'

           ব'লে গুরু চেয়ে রইলেন ঠাকুরের মুখের দিকে।

ঠাকুরের চক্ষু দীপ্ত হয়ে উঠল; বললেন,

           ‘যে লোকসৃষ্টি স্বয়ং আমার,

    যার প্রাঙ্গণে সকল মানুষের নিমন্ত্রণ,

  তার মধ্যে তোমার লোকস্থিতির বেড়া তুলে