সেঁজুতি

           রাত্রিদিনকে-কাঁদিয়ে-তোলা ব্যাকুল প্রাণের ব্যথা

                   পেত যদি ভাষার উদ্‌বেলতা,

 

তবে হোথায় দেখা দিত পাথর-ভাঙা স্রোতে

          মানবচিত্ত-তুঙ্গশিখর হতে

সাগর-খোঁজা নির্ঝর সেই, গর্জিয়া নর্তিয়া

          ছুটছে যাহা নিত্যকালের বক্ষে আবর্তিয়া

                              কান্নাহাসির পাকে —

তাহা হলে তেমনি করেই দেখে নিতেম তাকে

          চমক লেগে হঠাৎ পথিক দেখে যেমন ক ' রে

                   নায়েগারার জলপ্রপাত অবাক দৃষ্টি ভ ' রে।

 

 

          যুদ্ধ লাগল স্পেনে ;

চলছে দারুণ ভ্রাতৃহত্যা শতঘ্নীবাণ হেনে।

           সংবাদ তার মুখর হল দেশ-মহাদেশ জুড়ে

                   সংবাদ তার বেড়ায় উড়ে উড়ে

                             দিকে দিকে যন্ত্রগরুড়রথে

                   উদয়রবির পথ পেরিয়ে অস্তরবির পথে।

                             কিন্তু যাদের নাই কোনো সংবাদ,

                    কন্ঠে যাদের নাইকো সিংহনাদ,

          সেই-যে লক্ষ-কোটি মানুষ কেউ কালো কেউ ধলো,

                             তাদের বাণী কে শুনছে আজ বলো।

তাদের চিত্তমহাসাগর উদ্দাম উত্তাল

                             মগ্ন করে অন্তবিহীন কাল ;

          ওই তো তাহা সম্মুখেতেই, চার দিকে বিস্তৃত

                   পৃথ্বীজোড়া মহাতুফান, তবু দোলায় নি তো

                             তাহারই মাঝখানে-বসা আমার চিত্তখানি।

                                      এই প্রকাণ্ড জীবননাট্যে কে দিয়েছে টানি

                                                 প্রকাণ্ড এক অটল যবনিকা।

          ওদের আপন ক্ষুদ্র প্রাণের শিখা

                   যে আলো দেয় একা,