প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
কিন্তু ‘শুক শারীর’ কবিতার সহিত ‘সুন্দর সুন্দরী’র কবিতার এই প্রভেদ যে—প্রথমটি উত্তর-কাটাকাটির দৃষ্টান্ত, দ্বিতীয়টি মনস্তুষ্টিকর উত্তর-প্রত্যুত্তরের দৃষ্টান্ত। সুন্দরী শ্রীকৃষ্ণকে নানা বস্ত হইতে অভিলাষ করিতেছেন, সুন্দরও তাহাই হইতে উত্তরে অভিলাষ করিতেছেন—কিন্তু সুন্দরী রমণী-প্রকৃতি-সুলভ লজ্জায় সকল কথা খুলিয়া বলিতে পারিতেছেন না, সুন্দর সুরসিক পুরুষের মতো কেবল সুন্দরীর অভিলাষের উপর মাত্রা চড়াইতেছেন।
সুন্দর উত্তর করিলেন:
কেন না হইনু আমি চন্দ্রকরলেখা,
রাধার বরন,
রাধার শরীর থেকে, রাধারে ঢাকিয়া রেখে,
ভুলাতাম রাধারূপে অন্যজনমন —
পর ভুলান কেমন?
সুন্দরী বলেন:
কেন না হইলি তুই, কাননকুসুম,
রাধাপ্রেমাধার —
না ছুঁতেম অন্য ফুলে, বাঁধিতাম তোরে চুলে,
চিকণ গাঁথিয়া মালা, পরিতাম হার॥
মোর প্রাণধারা!
সুন্দর উত্তর করিলেন:
কেন না হইনু হায়! কুসুমের দাম,
কন্ঠের ভূষণ।
এক নিশা স্বর্গ সুখে, বঞ্চিয়া রাধার বুকে,
ত্যজিতাম নিশি গেলে জীবন যাতন —
মেখে শ্রীঅঙ্গচন্দন॥
দুঃখের বিষয় আমারা ‘তথাস্তু’ বলিতে পারিলাম না।
তৃতীয়, অধঃপতন সংগীতটিতে বঙ্কিম-ভাবের(?) রসিকতার চূড়ান্ত হইয়াছে। কিন্তু বিষয়ের দোষে রস মারা পড়িয়াছে—হাসিতে হাসিতে অধঃপতনে যাইতেছি কখনো যেন আর কাঁদিতে হইবে না—এ ভাব কী ভয়ানক ভাব! মানুষ মরিতেছে তাহার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া হাস্য-পরিহাস আমোদ-প্রমোদ— আমোদ-প্রমোদ করিবার আর কি স্থান নাই! কবিতাটিতে উত্তম রসিকতা প্রকাশ হইয়াছে; কিন্তু বিষয় নাকি অধঃপতন—নাম শুনিলেই গা কাঁপে—এ স্থানে রসিকতার হাস্যবদন দেখিয়া, অমাবস্যা রজনীতে শ্মশানমধ্যে একজন সুন্দরী রমণীকে খিল্খিল্ করিয়া হসিতে দেখিয়া—কাহারো যে হাসি পাইবে, সহৃদয় মানব প্রকৃতিতে তো এরূপ লেখে না; তবে যদি গ্রন্থকার দানব-প্রকৃতিকে লক্ষ্য করিয়া কবিতাটি রচিয়া থাকেন, তাহা হইলে তাহা বিকট হাস্য হাসাইবার মতো—ঘোরতর একটি অধঃপতনের পাথেয় সম্বল হইয়াছে—ইহা কেহই অস্বীকার করিতে পারিবেন না।
চতুর্থ—‘সাবিত্রী’—এই কবিতাটির স্থানে স্থানে দু-একটি সুন্দর বর্ণনা আছে—যখন যমরাজ শোকাতুরা সাবিত্রীর সন্মুখীন হইতেছে কবি লিখিতেছেন: