রাজা ও রানী

আছেন ত্রিবেদী — অতিশয় সাধুলোক,

সর্বদাই রয়েছেন জপমালা হাতে

ক্রিয়াকর্ম নিয়ে ; শুধু মন্ত্র-উচ্চারণে

লেশমাত্র নাই তাঁর ক্রিয়াকর্মজ্ঞান।

বিক্রমদেব।  অতি ভয়ানক। সখা, শাস্ত্র নাই যার

শাস্ত্রের উপদ্রব তার চতুর্গুণ।

নাই যার বেদবিদ্যা, ব্যাকরণ-বিধি,

নাই তার বাধাবিঘ্ন — শুধু বুলি ছোটে

পশ্চাতে ফেলিয়া রেখে তদ্ধিত প্রত্যয়

অমর পাণিনি। একসঙ্গে নাহি সয়

রাজা আর ব্যাকরণ দোঁহারে পীড়ন।

  দেবদত্ত।  আমি পুরোহিত! মহারাজ, এ সংবাদে

ঘন আন্দোলিত হবে কেশলেশহীন

যতেক চিক্কণ মাথা ; অমঙ্গল স্মরি

রাজ্যের টিকি যত হবে কণ্টকিত।

বিক্রমদেব।  কেন অমঙ্গলশঙ্কা?

  দেবদত্ত।                           কর্মকাণ্ডহীন

এ দীন বিপ্রের দোষে কুলদেবতার

রোষহুতাশন —

বিক্রমদেব।                  রেখে দাও বিভীষিকা।

কুলদেবতার রোষ নতশির পাতি

সহিতে প্রস্তুত আছি ; সহে না কেবল

কুলপুরোহিত-আস্ফালন। জান সখা,

দীপ্ত সূর্য সহ্য হয় তপ্ত বালি চেয়ে।

দূর করো মিছে তর্ক যত। এসো, করি

কাব্য-আলোচনা। কাল বলেছিলে তুমি

পুরাতন কবিবাক্য — ‘নাহিকো বিশ্বাস

রমণীরে’— আর-বার বলো শুনি।

  দেবদত্ত।                           শাস্ত্রং —

বিক্রমদেব।  রক্ষা করো — ছেড়ে দাও অনুস্বরগুলো।

  দেবদত্ত।  অনুস্বর ধনুঃশর নহে, মহারাজ,

কেবল টংকারমাত্র। হে বীরপুরুষ,