রাজা ও রানী

ভয় নাই। ভালো, আমি ভাষায় বলিব।—

‘যত চিন্তা কর শাস্ত্র চিন্তা আরো বাড়ে,

যত পূজা কর ভূপে ভয় নাহি ছাড়ে।

কোলে থাকিলেও নারী রেখো সাবধানে।

শাস্ত্র, নৃপ, নারী কভু বশ নাহি মানে। '

বিক্রমদেব।  বশ নাহি মানে! ধিক্ স্পর্ধা, কবি, তব!

চাহে কে করিতে বশ? বিদ্রোহী সে জন।

বশ করিবার নহে নৃপতি, রমণী।

  দেবদত্ত।  তা বটে। পুরুষ রবে রমণীর বশে।

বিক্রমদেব।  রমণীর হৃদয়ের রহস্য কে জানে?

বিধির বিধান-সম অজ্ঞেয় — তা বলে

অবিশ্বাস জন্মে যদি বিধির বিধানে,

রমণীর প্রেমে — আশ্রয় কোথায় পাবে?

নদী ধায়, বায়ু বহে কেমনে কে জানে।

সেই নদী দেশের কল্যাণ-প্রবাহিণী,

সেই বায়ু জীবের জীবন।

  দেবদত্ত।                           বন্যা আনে

সেই নদী, সেই বায়ু ঝঞ্ঝা নিয়ে আসে।

বিক্রমদেব।  প্রাণ দেয়, মৃত্যু দেয়— লই শিরে তুলি।

তাই বলে কোন্‌ মূর্খ চাহে তাহাদের

বশ করিবারে! বদ্ধ নদী বদ্ধ বায়ু

রোগ-শোক-মৃত্যুর নিদান। হে ব্রাহ্মণ,

নারীর কী জান তুমি?

  দেবদত্ত।                         কিছু না রাজন্‌!

ছিলাম উজ্জ্বল করে পিতৃমাতৃকুল

ভদ্র ব্রাহ্মণের ছেলে। তিন সন্ধ্যা ছিল

আহ্নিক তর্পণ। শেষে তোমারি সংসর্গে

বিসর্জন করিয়াছি সকল দেবতা,

কেবল অনঙ্গদেব রয়েছেন বাকি।

ভুলেছি মহিম্নস্তব, শিখেছি গাহিতে

নারীর মহিমা। সে বিদ্যাও পুঁথিগত—

তার পরে মাঝে মাঝে চক্ষু রাঙাইলে