রাজা ও রানী
দেখায় ঝাঁটা।’

কুঞ্জরলাল কামার। ভিক্ষে করে কিছু হবে না, আমরা লুট করব।

কিনু নাপিত। ভিক্ষেং নৈম নৈমচং। কী বল খুড়ো, তুমি তো স্মার্ত ব্রাহ্মণের ছেলে, লুটপাটে দোষ আছে কি?

নন্দলাল। কিছু না, খিদের কাছে পাপ নেই রে বাবা! জানিস তো অগ্নিকে বলে পাবক, অগ্নিতে সকল পাপ নষ্ট করে। জঠরাগ্নির বাড়া তো আর অগ্নি নেই।

অনেকে। আগুন। তা ঠিক বলেছ। বেঁচে থাকো ঠাকুর! তবে তাই হবে। তা আমরা আগুনই লাগিয়ে দেব। ওরে আগুনে পাপ নেই রে। এবার ওঁদের বড়ো বড়ো ভিটেতে ঘুঘু চরাব।

কুঞ্জর। আমার তিনটে সড়কি আছে।

মন্‌সুখ। আমার একগাছা লাঙ্গল আছে, এবার তাজপরা মাথাগুলো মাটির ঢেলার মতো চষে ফেলব।

শ্রীহর কলু। আমার একগাছ বড়ো কুড়ুল আছে, কিন্তু পালাবার সময় সেটা বাড়িতে ফেলে এসেছি।

হরিদীন কুমোর। ওরে, তোরা মরতে বসেছিস না কি? বলিস কী রে! আগে রাজাকে জানা, তার পরে যদি না শোনে, তখন অন্য পরামর্শ হবে।

কিনু নাপিত। আমিও তো সেই কথা বলি।

কুঞ্জর। আমিও তো তাই ঠাওরাচ্ছি।

শ্রীহর। আমি বরাবর বলে আসছি, ঐ কায়স্থর পো'কে বলতে দাও। আচ্ছা, দাদা, তুমি রাজাকে ভয় করবে না?

মন্নুরাম কায়স্থ। ভয় আমি কাউকে করি নে। তোরা লুঠ করতে যাচ্ছিস, আর আমি দুটো কথা বলতে পারি নে?

মন্‌সুখ। দাঙ্গা করা এক, আর কথা বলা এক। এই তো বরাবর দেখে আসছি — হাত চলে, কিন্তু মুখ চলে না।

কিনু। মুখের কোনো কাজটাই হয় না — অন্নও জোটে না, কথাও ফোটে না।

কুঞ্জর। আচ্ছা, তুমি কী বলবে বলো।

মন্নুরাম। আমি ভয় করে বলব না, আমি প্রথমেই শাস্ত্র বলব।

শ্রীহর। বল কী! তোমার শাস্তর জানা আছে? আমি তো তাই গোড়াগুড়িই বলছিলুম কায়স্থর পো'কে বলতে দাও — ও জানে-শোনে।

মন্নুরাম। আমি প্রথমেই বলব —

অতিদর্পে হতা লঙ্কা, অতিমানে চ কৌরবঃ।

অতিদানে বলির্বদ্ধঃ সর্বমত্যন্তংগর্হিতম॥

হরিদীন। হাঁ, এ শাস্ত্র বটে।

কিনু। ( ব্রাহ্মণের প্রতি ) কেমন খুড়ো, তুমি তো ব্রাহ্মণের ছেলে, এ শাস্ত্র কি না? তুমি তো এ সমস্তই বোঝ।

নন্দ। হাঁ — তা — ইয়ে — ওর নাম কী — তা বুঝি বৈকি। কিন্তু রাজা যদি না বোঝে, তুমি কী করে বুঝিয়ে দেবে, বলো তো শুনি।

মন্নুরাম। অর্থাৎ, বাড়াবাড়িটে কিছু নয়।

জওহর তাঁতি। ঐ অতবড়ো কথাটার এইটুকু মানে হল?

শ্রীহর। তা না হলে আর শাস্তর কিসের?