রাজা ও রানী

দেখ্‌ মনে করে। জননী, এসেছি আমি

রমণীহৃদয় বলি দিতে, রমণীর

ভালোবাসা ছিন্নশতদলসম দিতে

পদতলে। নারী তুমি, নারীর হৃদয়

জান তুমি, বল দাও জননী আমারে।

থেকে থেকে ওই শুনি রাজগৃহ হতে

‘ ফিরে এসো, ফিরে এসো রানী '— প্রেমপূর্ণ

পুরাতন সেই কণ্ঠস্বর। খড়্গ নিয়ে

তুমি এসো, দাঁড়াও রুধিয়া পথ, বলো,

‘ তুমি যাও, রাজধর্ম উঠুক জাগিয়া —

ধন্য হোক রাজা, প্রজা হোক সুখী, রাজ্যে

ফিরে আসুক কল্যাণ — দূর হোক যত

অত্যাচার — ভূপতির যশোরশ্মি হতে

ঘুচে যাক কলঙ্ককালিমা। তুমি নারী

ধরাপ্রান্তে যেথা স্থান পাও, একাকিনী

বসে বসে নিজ দুঃখে মরো বুক ফেটে। '

পিতৃসত্য পালনের তরে রামচন্দ্র

গিয়াছেন বনে, পতিসত্যপালনের

লাগি আমি যাব। যে সত্যে আছেন বাঁধা

মহারাজ রাজলক্ষ্মী-কাছে, কভু তাহা

সামান্য নারীর তরে ব্যর্থ হইবে না।


বাহিরে একজন পুরুষ ও স্ত্রীর প্রবেশ

  অনুচর। কে তোরা? দাঁড়া এইখানে।

    পুরুষ। কেন বাবা? এখানেও কি স্থান নেই?

      স্ত্রী। মা গো! এখানেও সেই সিপাই!


সুমিত্রার বাহিরে আগমন

সুমিত্রা। তোমরা কে গো।

পুরুষ। মিহিরগুপ্ত আমাদের ছেলেটিকে ধরে রেখে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের চাল নেই, চুলো নেই, মরবার জায়গাটুকু নেই — তাই আমরা মন্দিরে এসেছি। মার কাছে হত্যা দিয়ে পড়ব, দেখি তিনি আমাদের কী গতি করেন।

স্ত্রী। তা, হাঁ গা, এখেনেও তোমরা সিপাই রেখেছ? রাজার দরজা বন্ধ, আবার মায়ের দরজাও আগলে দাঁড়িয়েছ?