বিসর্জন

গুণবতী।     মেঘ ক্ষণিকের। এ মেঘ কাটিয়া

যাবে, বিধির উদ্যত বজ্র ফিরে যাবে,

চিরদিবসের সূর্য উঠিবে আবার

চিরদিবসের প্রথা জাগায়ে জগতে,

অভয় পাইবে সর্বলোক — ভুলে যাবে

দু দণ্ডের দুঃস্বপন। সেই আজ্ঞা করো।

ব্রাহ্মণ ফিরিয়া পাক নিজ অধিকার,

দেবী নিজ পূজা, রাজদণ্ড ফিরে যাক

নিজ অপ্রমত্ত মর্ত-অধিকার-মাঝে।

গোবিন্দমাণিক্য।   ধর্মহানি ব্রাহ্মণের নহে অধিকার।

অসহায় জীবরক্ত নহে জননীর

পূজা। দেবতার আজ্ঞা পালন করিতে

রাজা বিপ্র সকলেরই আছে অধিকার।

গুণবতী।     ভিক্ষা, ভিক্ষা চাই! একান্ত মিনতি করি

চরণে তোমার প্রভু! চিরাগত প্রথা

চিরপ্রবাহিত মুক্ত সমীরণ-সম,

নহে তা রাজার ধন — তাও জোড়করে

সমস্ত প্রজার নামে ভিক্ষা মাগিতেছে

মহিষী তোমার। প্রেমের দোহাই মানো

প্রিয়তম! বিধাতাও করিবেন ক্ষমা

প্রেম-আকর্ষণ-বশে কর্তব্যের ত্রুটি।

গোবিন্দমাণিক্য।   এই কি উচিত মহারানী? নীচ স্বার্থ,

নিষ্ঠুর ক্ষমতাদর্প, অন্ধ অজ্ঞানতা,

চির রক্তপানে স্ফীত হিংস্র বৃদ্ধ প্রথা —

সহস্র শত্রুর সাথে একা যুদ্ধ করি ;

শ্রান্তদেহে আসি গৃহে নারীচিত্ত হতে

অমৃত করিতে পান ; সেথাও কি নাই

দয়াসুধা? গৃহমাঝে পুণ্যপ্রেম বহে,

তারো সাথে মিশিয়াছে রক্তধারা? এত

রক্তস্রোত কোন্‌ দৈত্য দিয়েছে খুলিয়া —

ভক্তিতে প্রেমেতে রক্ত মাখামাখি হয়,

ক্রূর হিংসা দয়াময়ী রমণীর প্রাণে