বিসর্জন

সত্য আর মিথ্যায় প্রভেদ শুধু এই! —

মিথ্যারে রাখিয়া দিই মন্দিরের মাঝে

বহুযত্নে, তবুও সে থেকেও থাকে না।

সত্যেরে তাড়ায়ে দিই মন্দিরবাহিরে

অনাদরে, তবুও সে ফিরে ফিরে আসে।

অপর্ণা, যাস নে তুই — তোরে আমি, আর

ফিরাব না। আয়, এইখানে বসি দোঁহে।

অনেক হয়েছে রাত। কৃষ্ণপক্ষশশী

উঠিতেছে তরু-অন্তরালে। চরাচর

সুপ্তিমগ্ন, শুধু মোরা দোঁহে নিদ্রাহীন।

অপর্ণা, বিষাদময়ী, তোরেও কি গেছে

ফাঁকি দিয়ে মায়ার দেবতা? দেবতায়

কোন্‌ আবশ্যক? কেন তারে ডেকে আনি

আমাদের ছোটোখাটো সুখের সংসারে?

তারা কি মোদের ব্যথা বুঝে? পাষাণের

মতো, শুধু চেয়ে থাকে! আপন ভায়েরে

প্রেম হতে বঞ্চিত করিয়া, সেই প্রেম

দিই তারে — সে কি তার কোনো কাজে লাগে?

এ সুন্দরী সুখময়ী ধরণী হইতে

মুখ ফিরাইয়া, তার দিকে চেয়ে থাকি —

সে কোথায় চায়? তার কাছে ক্ষুদ্র বটে,

তুচ্ছ বটে, তবু তো আমার মাতৃধরা ;

তার কাছে কীটবৎ, তবু তো আমার

ভাই ; অবহেলে অন্ধরথচক্রতলে

দলিয়া চলিয়া যায়, তবু সে দলিত,

উপেক্ষিত, তারা তো আমার আপনার।

আয় ভাই, নির্ভয়ে দেবতাহীন হয়ে

আরো কাছাকাছি সবে বেঁধে বেঁধে থাকি।

রক্ত চাই? স্বরগের ঐশ্বর্য ত্যজিয়া

এ দরিদ্র ধরাতলে তাই কি এসেছ?

সেথায় মানব নেই, জীব নেই কেহ,

রক্ত নেই, ব্যথা পাবে হেন কিছু নেই —