বিসর্জন

তাই স্বর্গে হয়েছে অরুচি? আসিয়াছ

মৃগয়া করিতে, নির্ভয়বিশ্বাসসুখে

যেথা বাসা বেঁধে আছে মানবের ক্ষুদ্র

পরিবারে? — অপর্ণা, বালিকা, দেবী নাই!

অপর্ণা।      জয়সিংহ, তবে চলে এসো, এ মন্দির

ছেড়ে।

জয়সিংহ।    যাব, যাব, তাই যাব, ছেড়ে চলে

যাব। হায় রে অপর্ণা, তাই যেতে হবে।

তবু, যে রাজত্বে আজন্ম করেছি বাস

পরিশোধ করে দিয়ে তার রাজকর

তবে যেতে পাব। থাক্‌ ও-সকল কথা।

দেখ্‌ চেয়ে গোমতীর শীর্ণ জলরেখা

জ্যোৎস্নালোকে পুলকিত — কলধ্বনি তার

এক কথা শতবার করিছে প্রকাশ।

আকাশেতে অর্ধচন্দ্র পাণ্ডুমুখচ্ছবি

শ্রান্তিক্ষীণ — বহু রাত্রিজাগরণে যেন

পড়েছে চাঁদের চোখে আধেক পল্লব

ঘুমভারে। সুন্দর জগৎ! হা অপর্ণা,

এমন রাত্রির মাঝে দেবী নাই। থাক্‌

দেবী। অপর্ণা, জানিস কিছু সুখভরা

সুধাভরা কোনো কথা? শুধু তাই বল্‌।

যা শুনিলে মুহূর্তে অতলে মগ্ন হয়ে

ভুলে যাব জীবনের তাপ, মরণ যে

কত মধুরতাময় আগে হতে পাব

তার স্বাদ। অপর্ণা, এমন কিছু বল্‌

ওই মধুকণ্ঠে তোর, ওই মধু-আঁখি

রেখে মোর মুখপানে, এই জনহীন

স্তব্ধ রজনীতে, এই বিশ্বজগতের

নিদ্রামাঝে, বল্‌ রে অপর্ণা, যা শুনিলে

মনে হবে চারি দিকে আর কিছু নাই,

শুধু ভালোবাসা ভাসিতেছে, পূর্ণিমার

সুপ্তরাত্রে রজনীগন্ধার গন্ধসম।