বিসর্জন

নয়নরায়।    যে আদেশ প্রভু! কে আছে মায়ের শত্রু?

রঘুপতি।    গোবিন্দমাণিক্য।

নয়নরায়।                  আমাদের মহারাজ!

রঘুপতি।     লয়ে তব সৈন্যদল, অক্রমণ করো

তারে।

নয়নরায়।    ধিক্‌ পাপ-পরামর্শ! প্রভু, এ কি

পরীক্ষা আমারে?

রঘুপতি।     পরীক্ষাই বটে। কার

ভৃত্য তুমি। এবার পরীক্ষা হবে তার।

ছাড়ো চিন্তা, ছাড়ো দ্বিধা, কাল নাহি আর —

ত্রিপুরেশ্বরীর আজ্ঞা হতেছে ধ্বনিত

প্রলয়ের শৃঙ্গ-সম — ছিন্ন হয়ে গেছে

আজি সকল বন্ধন।

নয়নরায়।    নাই চিন্তা, নাই

কোনো দ্বিধা। যে পদে রেখেছে দেবী, আমি

তাহে রয়েছি অটল।

রঘুপতি।                         সাধু!

নয়নরায়।                              এত আমি

নরাধম জননীর সেবকের মাঝে!

মোর ‘ পরে হেন আজ্ঞা! আমি হব

বিশ্বাসঘাতক! আপনি দাঁড়ায়ে আছে

বিশ্বমাতা হৃদয়ের বিশ্বাসের 'পরে,

সেই তাঁর অটল আসন — আপনি তা

ভাঙিতে বলিবে দেবী আপনার মুখে?

তাহা হলে আজ যাবে রাজা, কাল দেবী —

মনুষ্যত্ব ভেঙে পড়ে যাবে জীর্ণভিত্তি

অড়্গালিকা-সম।

জয়সিংহ।                              ধন্য, সেনাপতি ধন্য!

রঘুপতি।     ধন্য বটে তুমি। কিন্তু এ কী ভ্রান্তি তব!

যে রাজা বিশ্বাসঘাতী জননীর কাছে,

তার সাথে বিশ্বাসের বন্ধন কোথায়?

নয়নরায়।    কী হইবে মিছে তর্কে? বুদ্ধির বিপাকে