বিসর্জন

নক্ষত্ররায়ের প্রবেশ

স্বগত

নক্ষত্ররায়।   যেথা যাই সকলেই বলে, ‘ রাজা হবে?' —

‘ রাজা হবে?' — এ বড়ো আশ্চর্য কাণ্ড। একা

বসে থাকি, তবু শুনি কে যেন বলিছে —

রাজা হবে? রাজা হবে? দুই কানে যেন

বাসা করিয়াছে দুই টিয়ে পাখি, এক

বুলি জানে শুধু — রাজা হবে? রাজা হবে?

ভালো বাপু, তাই হব, কিন্তু রাজরক্ত

সে কি তোরা এনে দিবি?

গোবিন্দমাণিক্য।                               নক্ষত্র!

নক্ষত্র সচকিত

     নক্ষত্র!

আমারে মারিবে তুমি? বলো, সত্য বলো,

আমারে মারিবে? এই কথা জাগিতেছে

হৃদয়ে তোমার নিশিদিন? এই কথা

মনে নিয়ে মোর সাথে হাসিয়া বলেছ

কথা, প্রণাম করেছ পায়ে, আশীর্বাদ

করেছ গ্রহণ, মধ্যাহ্নে আহারকালে

এক অন্ন ভাগ করে করেছ ভোজন

এই কথা নিয়ে? বুকে ছুরি দেবে? ওরে

ভাই, এই বুকে টেনে নিয়েছিনু তোরে

এ কঠিন মর্তভূমি প্রথম চরণে

তোর বেজেছিল যবে — এই বুকে টেনে

নিয়েছিনু তোরে, যেদিন জননী, তোর

শিরে শেষ স্নেহহস্ত রেখে, চলে গেল

ধরাধাম শূন্য করি — আজ সেই তুই

সেই বুকে ছুরি দিবি? এক রক্তধারা

বহিতেছে দোঁহার শরীরে, যেই রক্ত

পিতৃপিতামহ হতে বহিয়া এসেছে

চিরদিন ভাইদের শিরায় শিরায় —

সেই শিরা ছিন্ন করে দিয়ে সেই রক্ত