বিসর্জন

চাঁদপাল।                               মহারাজ,

সেবকের অনুনয় রাখো — পশুরক্ত

এত যদি ভালো লাগে নিষ্ঠুর প্রজার

দাও তাহাদের পশু, রাক্ষসী প্রবৃত্তি

পশুর উপর দিয়া যাক। সর্বদাই

ভয়ে ভয়ে আছি কখন কী হয়ে পড়ে।

গোবিন্দমাণিক্য।   আছে ভয় জানি চাঁদপাল, রাজকার্য

সেও আছে। পাথার ভীষণ, তবু তরী

তীরে নিয়ে যেতে হবে। গেছে কি প্রজার

দূত মোগলের কাছে?

চাঁদপাল।                             এতক্ষণে গেছে।

গোবিন্দমাণিক্য।   চাঁদপাল, তুমি তবে যাও এই বেলা,

মোগলের শিবিরের কাছাকাছি থেকো —

যখন যা ঘটে সেথা পাঠায়ো সংবাদ।

চাঁদপাল।     মহারাজ, সাবধানে ড়েকো হেথা প্রভু,

অন্তরে বাহিরে শত্রু।

[ প্রস্থান

গুণবতীর প্রবেশ

গোবিন্দমাণিক্য।                     প্রিয়ে, বড়ো শুষ্ক,

বড়ো শূন্য এ সংসার। অন্তরে বাহিরে

শত্রু। তুমি এসে ক্ষণেক দাঁড়াও হেসে,

ভালোবেসে চাও মুখপানে। প্রেমহীন

অন্ধকার ষড়যন্ত্র বিপদ বিদ্বেষ

সবার উপরে, হোক তব সুধাময়

আবির্ভাব, ঘোর নিশীথের শিরোদেশে

নির্নিমেষ চন্দ্রের মতন। প্রিয়তমে,

নিরুত্তর কেন? অপরাধ-বিচারের

এই কি সময়? তৃষার্ত হৃদয় যবে

মুমূর্ষুর মতো চাহে মরুভূমি-মাঝে

সুধাপাত্র হাতে নিয়ে ফিরে চলে যাবে?

[ গুণবতীর প্রস্থান

চলে গেলে! হায়, দুর্বহজীবন!