প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
অনেক অসাবধানী এমন আলগা করিয়া তাস ধরেন, তাঁহাদের হাতের কাগজ সকলেই দেখিতে পায়। পাঠকেরা যেন এমন করিয়া তাস না ধরেন। এমন অনেক বড়ো বড়ো ধনী খেলোয়াড় দেখিয়াছি, তাঁহারা এমনই আলগা করিয়া তাস ধরেন যে, প্রতিবেশীরা তাঁহাদের হাত হইতে আবশ্যকমতো সাতা টানে, আটা টানে, নহলা টানে, তাঁহারা মনে মনে ফুলিতে থাকেন, তবে বুঝি গোলামটাও টানিবে। তাঁহাদের হাতের কাগজ সব ফুরাইয়া যায়, কেবল গোলামটাই অবশিষ্ট থাকে।
পাঠকদের হাতে যদি গোলাম আসিয়া থাকে, চালান করিয়া দিবার কৌশল অবগত হউন। কোনো মতে মুখ-ভাবে না প্রকাশ হয়, হাতে গোলাম আছে। অনেক বড়ো বড়ো হৌসের হাতে গোলাম আসিয়া থাকে, লোকে যদি অঙ্কুশ মাত্রে জানিতে পারে যে, হৌসের হাতের কাগজে গোলাম দেখা দিয়াছে, তাহা হইলেই তাহার খেলা সাঙ্গ হয়। যে পরিবারের হাতে মূর্খ বরের গোলাম আছে, তাহারা যদি চারি দিকে কেতাব ছড়াইয়া রাখে, মুখস্থ বুলি বলিতে পারে, তাহা হইলে তাহারাও গোলাম চালাইয়া দিতে পারে। তুমি আমি যদি এ সংসারে মুখের জোরে চলিয়া যাইতে পারি, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হইতে পারি, রায় বাহাদুর হইতে পারি, তাহা হইলে আরও অনেক গোলাম চলিয়া যাইতে পারে।
একে তো গোলাম-চোর হইতেই বিশেষ আপত্তি আছে, তাহাতে যদি জানিতে পারি যে, আর একজন কৌশল করিয়া ভাঁড়াইয়া আমার হাতে গোলামটি চালান করিয়া দিয়াছেন, তাহা হইলে কিছু অপ্রস্তুত হইতে হয়। সংবাদপত্র ও মাসিকপত্রে সমালোচনা ও বিজ্ঞাপন যাঁহারা পাঠ করেন তাঁহারা ট্যাঁকের পয়সা খরচ করিয়া সহসা আবিষ্কার করেন, যে, গোলাম-চোর হইয়াছেন। সত্য কথা বলিতে কী, অনেক পাঠক তাসের কাগজ চেনে না, তাঁহারা অনেক সময়ে জানিতেই পারেন না যে, তাঁহারা গোলাম টানিয়াছেন। রঙচঙ দেখিয়া তাঁহারা ভারি খুশি হন, কিন্তু যাঁহারা তাসের কাগজ চেনেন, তাঁহারা গোলাম-চোরকে দেখিয়া মনে মনে হাসেন।
যাহা হউক, পাঠকেরা একবার ভাবিয়া দেখুন, কতবার গোলাম-চোর হইয়াছেন, কত রঙের গোলাম তাঁহার হাতে আছে। প্রকাশ করিবার আবশ্যক নাই, কথাটা চাপিয়া রাখুন, কিন্তু প্রতিবেশী গোলাম-চোর হইলে তাহা লইয়া অতিরিক্ত হাস্য-পরিহাস না করেন।