বনবাণী
আমার যে পুষ্পশোভা সে কেবল বাণীর ভূষায়,
নূতন চেতনে চিত্ত আপনারে পরাইতে চায়
                 সুরের গাঁথনি —
       গীতঝংকারের আবরণ।
 
যে অজস্র ভাষা তব উচ্ছ্বসিয়া উঠেছে কুসুমি
       ভূতলের চিরন্তনী কথা,
                 ওগো আম্রবন,
তাই বহে নিয়ে যাও, আকাশের অন্তরঙ্গ তুমি,
       ধরণীর বিরহবারতা
                 গভীর গোপন।
সে ভাষা সহজে মিশে বাতাসের নিশ্বাসে নিশ্বাসে,
            মৌমাছির গুঞ্জনে গুঞ্জনে,
                      ওগো আম্রবন।
আমার নিভৃত চিত্তে সে ভাষা সহজে চলে আসে,
মিশে যায় সংগোপনে অন্তরের আভাসে আশ্বাসে
                 স্বপনে বেদনে,
       ধ্যানে মোর করে সঞ্চরণ।
 
সুদূর জন্মের যেন ভুলে - যাওয়া প্রিয়কণ্ঠস্বর
       গন্ধে তব রয়েছে সঞ্চিত,
                 ওগো আম্রবন।
যেন নাম ধ’রে কোন্‌ কানে-কানে গোপন মর্মর
       তাই মোরে করে রোমাঞ্চিত
                      আজি ক্ষণে ক্ষণ।
আমার ভাবনা আজি প্রসারিত তব গন্ধ - সনে
       জনমমরণপরপার,
                 ওগো আম্রবন,
যেথায় অমরাপুরে সুন্দরের দেউলপ্রাঙ্গণে
জীবনের নিত্য-আশা সন্ন্যাসিনী, সন্ধ্যারতিক্ষণে
                 দীপ জ্বালি তার
       পূর্ণেরে করিছে সমর্পণ।