প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
‘ আপনায় স্থাপিয়াছ, জগতের দেবতারে নহে। '
ভ্রূ কুঞ্চিয়া কহে রাজা, ‘ বিংশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দিয়া
রচিয়াছি অনিন্দিত যে মন্দির অম্বর ভেদিয়া,
পূজামন্ত্রে নিবেদিয়া দেবতারে করিয়াছি দান,
তুমি কহ সে মন্দিরে দেবতার নাই কোনো স্থান! '
শান্ত মুখে কহে সাধু, ‘ যে বৎসর বহ্নিদাহে দীন
বিংশতি সহস্র প্রজা গৃহহীন অন্নবস্ত্রহীন
দাঁড়াইল দ্বারে তব, কেঁদে গেল ব্যর্থ প্রার্থনায়
অরণ্যে, গুহার গর্ভে, পথপ্রান্তে তরুর ছায়ায়,
অশ্বত্থবিদীর্ণ জীর্ণ মন্দিরপ্রাঙ্গণে, সে বৎসর
বিংশ লক্ষ মুদ্রা দিয়া রচি তব স্বর্ণদীপ্ত ঘর
দেবতারে সমর্পিলে। সে দিন কহিলা ভগবান —
‘ আমার অনাদি ঘরে অগণ্য আলোক দীপ্যমান
অনন্তনীলিমা - মাঝে ; মোর ঘরে ভিত্তি চিরন্তন
সত্য, শান্তি, দয়া, প্রেম। দীনশক্তি যে ক্ষুদ্র কৃপণ
নাহি পারে গৃহ দিতে গৃহহীন নিজ প্রজাগণে
সে আমারে গৃহ করে দান! ' চলি গেলা সেই ক্ষণে
পথপ্রান্তে তরুতলে দীন - সাথে দীনের আশ্রয়।
অগাধ সমুদ্র - মাঝে স্ফীত ফেন যথা শূন্যময়
তেমনি পরম শূন্য তোমার মন্দির বিশ্বতলে,
স্বর্ণ আর দর্পের বুদ্বুদ্! '
রাজা জ্বলি রোষানলে,
কহিলেন, ‘ রে ভন্ড পামর, মোর রাজ্য ত্যাগ করে
এ মুহূর্তে চলি যাও। '
সন্ন্যাসী কহিলা শান্ত স্বরে,
‘ ভক্তবৎসলেরে তুমি যেথায় পাঠালে নির্বাসনে
সেইখানে, মহারাজ, নির্বাসিত কর ভক্তজনে। '