কাহিনী

কাঁপিল প্রাঙ্গণ। ব্যাধি শান্তি নাহি মানে।

কাঁদিয়া শুধালো নারী, ‘ ব্রাহ্মণ ঠাকুর,

এত দুঃখে তবু পাপ নাহি হল দূর?

দিনরাত্রি দেবতার মেনেছি দোহাই,

দিয়েছি এত যে পূজা তবু রক্ষা নাই?

তবু কি নেবেন তাঁরা আমার বাছারে?

এত ক্ষুধা দেবতার? এত ভারে ভারে

নৈবেদ্য দিলাম খেতে বেচিয়া গহনা,

সর্বস্ব খাওয়ানু, তবু ক্ষুধা মিটিল না? '

ব্রাহ্মণ কহিল, ‘ বাছা, এ যে ঘোর কলি!

অনেক করেছ বটে তবু এও বলি,

আজকাল তেমন কি ভক্তি আছে কারো?

সত্যযুগে যা পারিত তা কি আজ পারো?

দানবীর কর্ণ - কাছে ধর্ম যবে এসে

পুত্রেরে চাহিল খেতে ব্রাহ্মণের বেশে,

নিজহস্তে সন্তানে কাটিল ; তখনি সে

শিশুরে ফিরিয়া পেল চক্ষের নিমেষে।

শিবিরাজা শ্যেনরূপী ইন্দ্রের মুখেতে

আপন বুকের মাংস কাটি দিল খেতে,

পাইল অক্ষয় দেহ। নিষ্ঠা এরে বলে।

তেমন কি এ কালেতে আছে ভূমন্ডলে?

মনে আছে ছেলেবেলা গল্প শুনিয়াছি

মার কাছে — তাঁদের গ্রামের কাছাকাছি

ছিল এক বন্ধ্যা নারী, না পাইয়া পথ

প্রথম গর্ভের ছেলে করিল মানত

মা গঙ্গার কাছে ; শেষে পুত্রজন্ম - পরে

অভাগী বিধবা হল, গেল সে সাগরে,

কহিল সে নিষ্ঠাভরে মা গঙ্গারে ডেকে,

মা, তোমারি কোলে আমি দিলাম ছেলেকে —

এ মোর প্রথম পুত্র, শেষ পুত্র এই,

এ জন্মের তরে আর পুত্র - আশা নেই।

যেমনি জলেতে ফেলা, মাতা ভাগীরথী