প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
উপাচার্য। তিনি প্রসন্ন হয়েছেন।
আচার্য। প্রসন্ন হয়েছেন? তা হবে। হয়তো প্রসন্নই হয়েছেন। কিন্তু কেমন করে জানব?
উপাচার্য। নইলে তিনি আসবেন কেন?
আচার্য। এক-এক সময়ে মনে ভয় হয় যে, হয়তো অপরাধের মাত্রা পূর্ণ হয়েছে বলেই তিনি আসছেন।
উপাচার্য। না, আচার্যদেব, এমন কথা বলবেন না। আমরা কঠোর নিয়ম সমস্তই নিঃশেষে পালন করেছি —কোনো ত্রুটি ঘটে নি।
আচার্য। কঠোর নিয়ম? হাঁ, সমস্তই পালিত হয়েছে।
উপাচার্য। বজ্রশুদ্ধিব্রত আমাদের আয়তনে এইবার নিয়ে ঠিক সাতাত্তর বার পূর্ণ হয়েছে। আর কোনো আয়তনে এ কি সম্ভবপর হয়!
আচার্য। না, আর কোথাও হতে পারে না।
উপাচার্য। কিন্তু তবু আপনার মনে এমন দ্বিধা হচ্ছে কেন?
আচার্য। সূতসোম, তোমার মনে কি তুমি শান্তি পেয়েছ?
উপাচার্য। আমার তো একমুহূর্তের জন্যে অশান্তি নেই।
আচার্য। অশান্তি নেই?
উপাচার্য। কিছুমাত্র না। আমার অহোরাত্র একেবারে নিয়মে বাঁধা। এর চেয়ে আর শান্তি কী হতে পারে?
আচার্য। ঠিক, ঠিক –ঠিক বলেছ সূতসোম। অচেনার মধ্যে গিয়ে কোথায় তার অন্ত পাব? এখানে সমস্তই জানা, সমস্তই অভ্যস্ত – এখানকার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখানকারই সমস্ত শাস্ত্রের ভিতর থেকে পাওয়া যায় –তার জন্যে একটুও বাইরে যাবার দরকার হয় না। এই তো নিশ্চল শান্তি!
উপাচার্য। আচার্যদেব, আপনাকে এমন বিচলিত হতে কখনো দেখি নি।
আচার্য। কী জানি, আমার কেমন মনে হচ্ছে কেবল একলা আমিই না, চারি দিকে সমস্তই বিচলিত হয়ে উঠছে। আমার মনে হচ্ছে আমাদের এখানকার দেয়ালের প্রত্যেক পাথরটা পর্যন্ত বিচলিত। তুমি এটা অনুভব করতে পারছ না সূতসোম?
উপাচার্য। কিছুমাত্র না। এখানকার অটল স্তব্ধতার লেশমাত্র বিচ্যুতি দেখতে পাচ্ছি নে। আমাদের তো বিচলিত হবার কথাও না। আমাদের সমস্ত শিক্ষা কোন্ কালে সমাধা হয়ে গেছে। আমাদের সমস্ত লাভ সমাপ্ত, সমস্ত সঞ্চয় পর্যাপ্ত। ঐ-যে পঞ্চক আসছে। পাথরের মধ্যে কি ঘাস বেরোয়? এমন ছেলে আমাদের আয়তনে কী করে সম্ভব হল! ঐ আমাদের দুর্লক্ষণ। এই আয়তনের মধ্যে ও কেবল আপনাকেই মানে। আপনি ওকে একটু ভর্ৎসনা করে দেবেন।
আচার্য। আচ্ছা তুমি যাও। আমি ওর সঙ্গে একটু নিভৃতে কথা কয়ে দেখি।
আচার্য। (পঞ্চকের গায়ে হাত দিয়া) বৎস পঞ্চক!
পঞ্চক। করলেন কী! আমাকে ছুঁলেন?
আচার্য। কেন, বাধা কী আছে?