আমারে ছাড়িয়া
দূরে   পড়ে গেল ভেঙেচুরে,
             
পিছে পিছে আমি ধাই নিতি—
        
একটি কণাও আর পাই না লখিতে।
 
        
কোথাও রাখিতে নারি দেহ আপনার,
        
সর্বাঙ্গ অবশ ক্লান্ত নিজ লৌহভারে।
     কাতরে ডাকিতে
চাহি,    শ্বাস নাহি, স্বর নাহি,
             
কণ্ঠেতে চেপেছে অন্ধকার—
        
বিশ্বের প্রলয় একা আমার মাঝারে।
 
        
দীর্ঘ তীক্ষ্ম হই ক্রমে তীব্র গতিবলে
        
ব্যগ্রগামী ঝটিকার আর্তস্বরসম,
     সূক্ষ্ম বাণ
সূচিমুখ   অনন্ত কালের বুক
             
বিদীর্ণ করিয়া যেন চলে—
        
রেখা হয়ে মিশে আসে দেহমন মম।
 
        
ক্রমে মিলাইয়া গেল সময়ের সীমা,
        
অনন্তে মুহূর্তে কিছু ভেদ নাহি আর।
     ব্যাপ্তিহারা
শূন্যসিন্ধু   শুধু যেন এক বিন্দু
             
গাঢ়তম অন্তিম কালিমা—
        
আমারে গ্রাসিল সেই বিন্দুপারাবার।
 
        
অন্ধকারহীন হয়ে গেল অন্ধকার।
        
‘আমি’ ব’লে কেহ নাই, তবু যেন আছে।
     অচৈতন্যতলে
অন্ধ   চৈতন্য হইল বন্ধ,
             
রহিল প্রতিক্ষা করি কার
        
মৃত হয়ে প্রাণ যেন চিরকাল বাঁচে।
 
        
নয়ন মেলিনু, সেই বহিছে জাহ্নবী—
        
পশ্চিমে গৃহের মুখে চলেছে তরণী।
     তীরে কুটিরের তলে স্তিমিত
প্রদীপ জ্বলে,
             
শূন্যে চাঁদ সুধামুখচ্ছবি।
        
সুপ্ত জীব কোলে লয়ে জাগ্রত ধরণী।