চণ্ডালিকা
বাঁধা পড়ে থাকতে হবে দাসী হয়ে।

মা। মিছে রাগ করিস কেন, বাছা। দাসীজন্মই যে তোর। বিধাতার লিখন খণ্ডাবে কে।

প্রকৃতি। ছি ছি, মা, আবার তোকে বলছি, ভুলিস নে, মিথ্যে নিন্দে রটাস নে নিজের— পাপ সে পাপ! রাজার বংশে কত দাসী জন্মায় ঘরে ঘরে, আমি দাসী নই। ব্রাহ্মণের ঘরে কত চণ্ডাল জন্মায় দেশে দেশে, আমি নই চণ্ডাল।

মা। তোর সঙ্গে কথা কইতে পারি এমন কথা আমি জানি নে। তা ভালো, আমি নিজে যাব তাঁর কাছে। পায়ে ধরে বলব, তুমি অন্ন নিয়ে থাক সব ঘর থেকেই, আমার ঘরে কেবল এক গণ্ডূষ জল নিতে এসো।

প্রকৃতি।                                              গান

না না,   ডাকব না, ডাকব না অমন করে বাইরে থেকে।

পারি যদি অন্তরে তার ডাক পাঠাব, আনব ডেকে।

     দেবার ব্যথা বাজে আমার বুকের তলে,

     নেবার মানুষ জানি নে তো কোথায় চলে,

          এই    দেওয়া-নেওয়ার মিলন আমার ঘটাবে কে।

মিলবে না কি মোর বেদনা তার বেদনাতে

গঙ্গাধারা মিশবে না কি কালো যমুনাতে।

     আপনি কী সুর উঠল বেজে

     আপনা হতে এসেছে যে,

          গেল যখন আশার বচন গেছে রেখে॥


পৃথিবী যখন অনাবৃষ্টিতে ফেটে চৌচির, কী হবে, মা, এক-ঘটি জল সংগ্রহ করে। আপনি আসবে না মেঘ আপন টানে, আকাশ ভরে দিয়ে?

মা। এ-সব কথা বলে লাভ কী। মেঘ আপনি আসে তো আসে, না আসে তো আসেই না। খেত-খন্দ যদি শুকিয়ে যায় তাতে কার কিসের গরজ। আমরা আকাশে তাকিয়ে থাকি, আর কী করতে পারি।

প্রকৃতি। সে হবে না। তাকিয়ে বসে থাকব না, মন্তর জানিস তুই, সেই মন্তর হোক আমার বাহুবন্ধন, আনুক তাঁকে টেনে।

মা। ওরে সর্বনাশী, বলিস কী! সাহস কেবলই বাড়ছে দেখি! আগুন নিয়ে খেলা! এরা কি সাধারণ মানুষ! মন্তর খাটাব এদের ’পরে? শুনে বুক কেঁপে ওঠে।

প্রকৃতি। রাজার ছেলের বেলায় মন্তর পড়তে চেয়েছিলি কোন্‌ সাহসে।

মা। ভয় করি নে রাজাকে, সে শূলে চড়াতে পারে। কিন্তু, এরা যে কিছুই করে না।

প্রকৃতি। আমি আর কোনো ভয় করি নে; ভয় করি, আবার যাব নেমে, আবার আপনাকে ভুলব, আবার ঢুকব আঁধার কোঠায়। সে যে মরণের বাড়া। আনতেই হবে তাঁকে, এতবড়ো কথা এত জোর করে বলছি, এ কি আশ্চর্য নয়— এই আশ্চর্যই তো