কড়ি ও কোমল

আসি, থাকি, চলে যাই কত ছায়া কত উপছায়া!


তাই কি? সকলি ছায়া? আসে, থাকে, আর মিলে যায়?

তুমি শুধু একা আছ, আর সব আছে আর নাই?

যুগযুগান্তর ধরে ফুল ফুটে, ফুল ঝরে তাই?

প্রাণ পেয়ে প্রাণ দিই, সে কি শুধু মরণের পায়?

এ ফুল চাহে না কেহ? লহে না এ পূজা - উপহার?

এ প্রাণ, প্রাণের আশা, টুটে কি অসীম শূন্যতায়।

বিশ্বের উঠিছে গান, বধিরতা বহি সিংহাসনে?

বিশ্বের কাঁদিছে প্রাণ, শূন্যে ঝরে অশ্রুবারিধার?

যুগযুগান্তের প্রেম কে লইবে, নাই ত্রিভুবনে?

চরাচর মগ্ন আছে নিশিদিন আশার স্বপনে —

বাঁশি শুনি চলিয়াছে, সে কি হায় বৃথা অভিসার!

বলো না সকলি স্বপ্ন, সকলি এ মায়ার ছলন —

বিশ্ব যদি স্বপ্ন দেখে, সে স্বপন কাহার স্বপন?

সে কি এই প্রাণহীন প্রেমহীন অন্ধ অন্ধকার?


ধ্বনি খুঁজে প্রতিধ্বনি, প্রাণ খুঁজে মরে প্রতিপ্রাণ।

জগৎ আপনা দিয়ে খুঁজিছে তাহার প্রতিদান।

অসীমে উঠিছে প্রেম শুধিবারে অসীমের ঋণ —

যত দেয় তত পায়, কিছুতে না হয় অবসান।

যত ফুল দেয় ধরা তত ফুল পায় প্রতিদিন —

যত প্রাণ ফুটাইছে ততই বাড়িয়া উঠে প্রাণ।

যাহা আছে তাই দিয়ে ধনী হয়ে উঠে দীনহীন,

অসীমে জগতে একি পিরিতির আদান - প্রদান!

কাহারে পূজিছে ধরা শ্যামল যৌবন - উপহারে,

নিমেষে নিমেষে তাই ফিরে পায় নবীন যৌবন।

প্রেমে টেনে আনে প্রেম, সে প্রেমের পাথার কোথা রে!

প্রাণ দিলে প্রাণ আসে, কোথা সেই অনন্ত জীবন!

ক্ষুদ্র আপনারে দিলে, কোথা পাই অসীম আপন —

সে কি ওই প্রাণহীন প্রেমহীন অন্ধ অন্ধকারে!