মুক্তির উপায়

হৈম। তাতে লিখেছে, প্রাইভেট সিনেমায় সেতুবন্ধ নাটকের জন্যে লোক চাই, হনুমানের পার্ট অভিনয় করবে। তোমার আবার সিনেমা কোথায়।

পুষ্প। এই তো চার দিকেই চলচ্ছবির নাট্যশালা, তোমাদের সবাইকে নিয়েই।

হৈম। তা যেন বুঝলুম, এর মধ্যে হনুমানের অভাব ঘটল কবে থেকে।

পুষ্প। দল পুরু আছে ঘরে ঘরে। একটা পাগলা পালিয়েছে লেজ তুলে, ডাক দিচ্ছি তাকে।

হৈম। সাড়া মিলেছে?

পুষ্প। মিলেছে।

হৈম। তার পরে?

পুষ্প। রহস্য এখন ভেদ করব না।

হৈম। যা খুশি কোরো, আমার প্রাণীটিকে বেশি দিন ছাড়া রেখো না। ঐ কে আসছে ভাই, দাড়িগোঁফঝোলা চোহারা— ওকে তাড়িয়ে দিতে বলে দিই।

পুষ্প। না না, তুমি বরঞ্চ যাও, আমি ওর সঙ্গে কাজ সেরে নিই।

[ হৈমর প্রস্থান
সেই লোকের প্রবেশ

পুষ্প। তুমি কে?

সেই লোক। সেটা প্রকাশের যোগ্য নয় গোড়া থেকেই, জন্মকাল থেকেই। আমি বিধাতার কুকীর্তি, হাতের কাজের যে নমুনা দেখিয়েছেন তাতে তাঁর সুনাম হয় নি।

পুষ্প। মন্দ তো লাগছে না!

সেই লোক। অর্থাৎ, মজা লাগছে। ঐ গুণেই বেঁচে গেছি। প্রথম ধাক্কাটা সামলে নিলেই লোকের মজা লাগে। লোক হাসিয়েছি বিস্তর।

পুষ্প। কিন্তু, সব জায়গায় মজা লাগে নি।

সেই লোক। খবর পেয়েছ দেখছি। তা হলে আর লুকিয়ে কী হবে। নাম আমার শ্রীমাখনচন্দ্র। বুঝতেই পারছ, যাত্রার দলের সরকারি গোঁফদাড়ি পরে এসেছি কেন। এ পাড়ায় মুখ দেখাবার সাহস নেই, পিঠ দেখানোই অভ্যেস হয়ে গেছে।

পুষ্প। এলে যে বড়ো?

মাখন। চলেছিলুম নাজিরপুরে ইলিশ মাছ ধরার দলে। ইস্টেশনে দেখি বিজ্ঞাপন, হনুমানের দরকার। রইল পড়ে জেলেগিরি। জেলেরা ছাড়তে চায় না, আমাকে ভালোবাসে। আমি বললুম, ভাই, এদের বিজ্ঞাপনের পয়সা বেবাক লোকসান হবে আমি যদি না যাই— আর দ্বিতীয় মানুষ নেই যার এত বড়ো যোগ্যতা। এ তো আর ত্রেতাযুগ নয়!

পুষ্প। খাওয়াপরার কিছু টানাটানি পড়েছে বুঝি?

মাখন। নিতান্ত অসহ্য হয় নি। কেবল যখন ধনেশাক দিয়ে ডিমওয়ালা কই মাছের ঝোলের গন্ধস্মৃতি অন্তরাত্মার মধ্যে পাক খেয়ে ওঠে, তখন আমার শ্রীমতী বাঁয়া আর শ্রীমতী তবলার তেরেকেটে মেরেকেটে ভির্‌‌‌কুটি মির‍্‍কুটির তালে তালে দূর থেকে মন কেমন ধড়্ ফড়্ করতে থাকে।