তপতী

দেবদত্ত। মহারাজ, ঐ দেবতাটিকে যথাসাধ্য পাশ কাটিয়ে চলবারই চেষ্টা করেছি। আভাসে যেটুকু জানাশোনা ঘটেছে তাতে ভৈরবের সঙ্গে অন্তত বেশেভূষায় ওঁর যথেষ্ট মিল দেখতে পাই নি।

বিক্রম। তার কারণ, এ পর্যন্ত রতি নিজেরই বেশের অংশ দিয়ে কন্দর্পকে সাজিয়েছে। তাঁকে রাঙিয়েছে নিজেরই কজ্জলের কালিমায়, কুঙ্কুমের রক্তিমায়, নীল কঞ্চুলিকার নীলিমায়— উনি রমণীর লালনে লালিত্যে আচ্ছন্ন আবিষ্ট, তাই তো বজ্রপাণি ইন্দ্রের সভায় উনি লজ্জিত ভাবে চরের বৃত্তি করেন। রুদ্রের পৌরুষের আগুনে তাই তো ওঁকে দগ্ধ করেছিল।

দেবদত্ত। সে ইতিহাস তো চুকে গেছে। আবার সেই পোড়া দেবতাকে নিয়ে কেন এই উপসর্গ। পুনর্বার ওঁকে পোড়াতে হবে নাকি।

বিক্রম। না, তাঁকে মৃত্যুর ভিতর দিয়েই বাঁচাতে হবে — সেজন্যে বীরের শক্তি চাই। তোমাদের ভৈরবের স্তব সম্পূর্ণ হবে না আমাদের মীনকেতুর স্তব যদি তার সঙ্গে না যোগ করি।

গান
ভস্ম-অপমানশয্যা ছাড়ো, পুষ্পধনু,
রুদ্রবহ্নি হতে লহো জ্বলদর্চি তনু।
যাহা মরণীয় যাক মরে,
জাগো অবিস্মরণীয় ধ্যানমূর্তি ধরে।
যাহা রূঢ়, যাহা মূঢ় তব,
যাহা স্থূল দগ্ধ হোক, হও নিত্য নব।
মৃত্যু হতে জাগো পুষ্পধনু,
হে অতনু, বীরের তনুতে লহো তনু।


তোমরা জান না, মহেশ্বর মদনকে অগ্নিবর দিয়েছিলেন, মৃত্যু দিয়েই তিনি তাকে অমর করেছেন। অনঙ্গই অমৃত দেবার অধিকারী হয়েছেন।


মৃত্যুঞ্জয় যে-মৃত্যুরে দিয়েছেন হানি
অমৃত সে-মৃত্যু হতে দাও তুমি আনি।
সেই দিব্য দীপ্যমান দাহ
উন্মুক্ত করুক অগ্নি-উৎসের প্রবাহ।
মিলনেরে করুক প্রখর,
বিচ্ছেদেরে করে দিক দুঃসহ সুন্দর।
মৃত্যু হতে ওঠো পুষ্পধনু,
হে অতনু, বীরের তনুতে লহ তনু।

মীনকেতুর পথ সহজ পথ নয়, সে নয় পুষ্পবিকীর্ণ ভোগের পথ, সে দেয় না আরামের তৃপ্তি।