তপতী

বিক্রম। শুনে যাও মহিষী।

সুমিত্রা। (ফিরে এসে) কী, বলো।

বিক্রম। তুমি জাগছ না কেন। কিসের এই সূক্ষ্ম আবরণ। সমস্ত আমার রাজার শক্তি নিয়ে একে সরাতে পারলেম না। আপনাকে প্রকাশ করো— দেখা দাও, ধরা দাও। আমাকে এই অত্যন্ত অদৃশ্য বঞ্চনায় বিড়ম্বিত কোরো না।

সুমিত্রা। আমিও তোমাকে ঐ কথাই বলছি। তুমি রাজা, আমি তোমার সম্পূর্ণ প্রকাশ দেখতে পাচ্ছি নে— তোমার শক্তিকে অন্ধকারে ঢেকে রাখলে। তুমি জাগ নি। তুমি আমাকে কেড়ে নিয়ে এসেছ কাশ্মীর থেকে — সেই অপমান আমার ঘুচিয়ে দাও — আমাকে রানীর পদ দিতে হবে।

বিক্রম। আচ্ছা আচ্ছা, আমার রাজকোষ তোমার পায়ের তলায় সম্পূর্ণ ফেলে দিচ্ছি — তুমি প্রজাদের দান করতে চাও, করো দান যত খুশি। তোমার দাক্ষিণ্যের প্লাবন বয়ে যাক এ রাজ্যে।

সুমিত্রা। ক্ষমা করো মহারাজ, তোমার কোষ তোমারই থাক্‌। আমার দেহের অলংকার থাক্‌ আমার প্রজার জন্যে। অন্যায়ের হাত থেকে প্রজারক্ষায় যদি মহিষীর অধিকার আমার না থাকে তবে এ-সব তো বন্দিনীর বেশভূষা — এ বইতে পারব না। মহিষীকে যদি গ্রহণ কর সেবিকাকেও পাবে, নইলে শুধু দাসী! সে আমি নই।

[ প্রস্থান
মন্ত্রীর প্রবেশ

বিক্রম। যুধাজিতের নামে রানীর কাছে কে অভিযোগ করেছিল? তুমি?

মন্ত্রী। মন্ত্রগৃহের বাইরে আমি মন্ত্রণা করি নে, মহারাজ!

বিক্রম। তবে এ-সব কথা কে তার কানে তুললে?

মন্ত্রী। যারা দুঃখ পেয়েছে তারা স্বয়ং।

বিক্রম। রানীর সাক্ষাৎ তারা পায় কী করে।

মন্ত্রী। করুণার যোগ্য যারা করুণাময়ী স্বয়ং তাদের সন্ধান রাখেন।

বিক্রম। আমাকে অতিক্রম করে যারা রানীর কাছে আবেদন নিয়ে আসে তারা দণ্ডের যোগ্য এ কথা যেন মনে থাকে।

মন্ত্রী। দণ্ড তারা পেয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা তাদের পাকা ফসলের খেত জ্বালিয়ে দিয়েছে, এ কথা সবাই জানে।

বিক্রম। মন্ত্রী, নানা কৌশলে তুমি এই অমাত্যদের নামে নিন্দা করবার সুযোগ খোঁজ, এটা আমি লক্ষ্য করেছি।

মন্ত্রী। নিন্দনীয়দের নিন্দা করে থাকি কিন্তু কৌশল করে নয়।

বিক্রম। এই বিদেশীরা আমার আশ্রিত, তোমাদের ঈর্ষা থেকে তাদের বিশেষভাবে রক্ষা করা আমার রাজকর্তব্য।

মন্ত্রী। ওদের সম্বন্ধে নীরব থাকব। কিন্তু গুরুতর মন্ত্রণার বিষয় আছে। মহারাজ, ক্ষণকালের জন্যে —

বিক্রম। এখন সময় নয়। যাও, বিপাশাকে সংবাদ দাও আজ বকুলবীথিকায় মধ্যরাত্রে তার নৃত্য। ত্রিবেদীকে বোলো মীনকেতুর পূজায় মন্ত্রোচ্চারণে তার কোনো স্খলন সহ্য করব না।

মন্ত্রী। কাশ্মীরদেশী অমাত্য সবাই উৎসবে আসবেন সংবাদ পাঠিয়েছেন।

বিক্রম। মহারানীর সঙ্গে কোনোমতে তাদের সাক্ষাৎ না হয়, সতর্ক থেকো।

[উভয়ের প্রস্থান