সেঁজুতি

বীভৎস চীৎকারে তারা রাত্রিদিন করে ফেরাফেরি,

নির্লজ্জ হিংসায় করে হানাহানি।

 

                               শুনি তাই আজি

মানুষ-জন্তুর হুহুংকার দিকে দিকে উঠে বাজি।

তবু যেন হেসে যাই যেমন হেসেছি বারে বারে

পণ্ডিতের মূঢ়তায়, ধনীর দৈন্যের অত্যাচারে,

সজ্জিতের রূপের বিদ্রূপে। মানুষের দেবতারে

ব্যঙ্গ করে যে অপদেবতা বর্বর মুখবিকারে

তারে হাস্য হেনে যাব, বলে যাব, ‘ এ প্রহসনের

মধ্য-অঙ্কে অকস্মাৎ হবে লোপ দুষ্ট স্বপনের ;

নাট্যের কবররূপে বাকি শুধু রবে ভস্মরাশি

দগ্ধশেষ মশালের, আর অদৃষ্টের অট্টহাসি। '

বলে যাব, ‘ দ্যূতচ্ছলে দানবের মূঢ় অপব্যয়

গ্রন্থিতে পারে না কভু ইতিবৃত্তে শাশ্বত অধ্যায়। '

 

বৃথা বাক্য থাক্‌। তব দেহলিতে শুনি ঘন্টা বাজে,

শেষপ্রহরের ঘন্টা ; সেই সঙ্গে ক্লান্ত বক্ষোমাঝে

শুনি বিদায়ের দ্বার খুলিবার শব্দ সে অদূরে

ধ্বনিতেছে সূর্যাস্তের রঙে রাঙা পূরবীর সুরে।

জীবনের স্মৃতিদীপে আজিও দিতেছে যারা জ্যোতি

সেই ক ' টি বাতি দিয়ে রচিব তোমার সন্ধ্যারতি

সপ্তর্ষির দৃষ্টির সম্মুখে ; দিনান্তের শেষ পলে

রবে মোর মৌন বীণা মূর্ছিয়া তোমার পদতলে।

আর রবে পশ্চাতে আমার, নাগকেশরের চারা

ফুল যার ধরে নাই, আর রবে খেয়াতরীহারা

এ পারের ভালোবাসা — বিরহস্মৃতির অভিমানে

ক্লান্ত হয়ে রাত্রিশেষে ফিরিবে সে পশ্চাতের পানে।