ছড়ার ছবি
সর্ব অঙ্গে ব্যাপ্ত যেন রাশীকৃত স্নেহ।
আকাল এখন, সামরু নিজে দুইবেলা আধ-পেটা ;
সুধিয়াকে খাওয়ানো চাই যখনি পায় যেটা।
দিনের কাজের অবসানে গোয়ালঘরে ঢুকে
ব ' কে যায় সে গাভীর কানে যা আসে তার মুখে।
কারো 'পরে রাগ সে জানায়, কখনো সাবধানে
গোপন খবর থাকলে কিছু জানায় কানে কানে।
সুধিয়া সব দাঁড়িয়ে শোনে কানটা খাড়া ক ' রে,
বুঝি কেবল ধ্বনির সুখে মন ওঠে তার ভরে।
সামরু যখন ছোটো ছিল পালোয়ানের পেশা
ইচ্ছা করেছিল নিতে, ঐ ছিল তার নেশা।
খবর পেল, নবাববাড়ি কুস্তিগিরের দল
পাল্লা দেবে — সামরু শুনে অসহ্য চঞ্চল।
বাপকে ব ' লে গেল ছেলে, “ কথা দিচ্ছি শোনো,
এক হপ্তার বেশি দেরি হবে না কখ্খোনো। ”
ফিরে এসে দেখতে পেলে, সুধিয়া তার গাই
শেঠ নিয়েছে ছলে বলে গোয়ালঘরে নাই।
যেমনি শোনা অমনি ছুটল, ভোজালি তার হাতে,
দুনিচাঁদের গদি যেথায় নাজির মহল্লাতে।
“ কী রে সামরু, ব্যাপারটা কী ” শেঠজি শুধায় তাকে।
সামরু বলে “ ফিরিয়ে নিতে এলুম সুধিয়াকে। ”
শেঠ বললে, “ পাগল নাকি, ফিরিয়ে দেব তোরে,
পরশু ওকে নিয়ে এলুম ডিক্রিজারি করে। ”
“ সুধিয়া রে ” “ সুধিয়া রে ” সামরু দিল হাঁক,
পাড়ার আকাশ পেরিয়ে গেল বজ্রমন্দ্র ডাক।
চেনা সুরের হাম্বা ধ্বনি কোথায় জেগে উঠে,
দড়ি ছিঁড়ে সুধিয়া ঐ হঠাৎ এল ছুটে।
দু চোখ বেয়ে ঝরছে বারি, অঙ্গটি তার রোগা,
অন্নপানে দেয়নি সে মুখ, অনশনে-ভোগা।
সামরু ধরল জড়িয়ে গলা, বললে, “ নাই রে ভয়,
আমি থাকতে দেখব এখন কে তোরে আর লয়। —