তপতী

৩। কবি, ইচ্ছে করছে তোমাকে একটা মালা দিই।

নরেশ। মালা আমি নিই নে। আমার গান যাঁর কণ্ঠে, আমার মালাও তাঁরই কণ্ঠে পড়ে।

৪। সে তো ভালো কথা। উনি মালা পরার যোগ্য বটেন। হাঁ গা, তোমাদের ডালিতে তো মালা অনেক আছে, একখানা দাও-না ওঁকে পরিয়ে দিই।

প্রথমা। হাঁ, দিলাম বলে।

৪। ভালোমানুষের ঝি, দিলে দোষ কী।

দ্বিতীয়া। তোমরা দোষ দেখতে পাবে কেন? পথে ঘাটে মালা পরিয়ে বেড়ানো তোমাদের স্বভাব যে।

৩। মাসি, রাগ কর কেন?

দ্বিতীয়া। আর ‘মাসি মাসি’ করতে হবে না।

৩। আচ্ছা, ছাড়লেম মাসি বলা, যা বললে খুশি হও তাই বলব। আপাতত একখানা মালা দাও-না, ওঁকে পরিয়ে দিই।

তৃতীয়া। তোমরা কি লজ্জার মাথা খেয়ে বসেছ! কোথাকার কে তার ঠিক নেই, রাজার অভিষেকের মালা দিতে হবে! এত সস্তা নয় গো।

১। ও কথা বোলো না দিদিশাশুড়ি, রাজা থাকলে স্বয়ং ওকে মালা দিতেন।

দ্বিতীয়া। ভরততলির লোক, তোমাদের ব্যাভারটা কী রকম গো। ওকে দিদিশাশুড়ি বল কোন্‌ সম্পর্কে। ও আমার বোনঝি।

১। মাসি বলতে সাহস হল না। ভাবলুম দাদাশ্বশুরের গ্রামে থাকে, ঐ সম্পর্কের নামটা বেমানান হবে না।

প্রথমা। ঐ যে রাজা আসছেন শিবির থেকে। এখনো তো সময় হয় নি। এরা সব গান গেয়ে উৎপাত করে বের করে আনলে।

সকলে। জয়, মহারাজ কুমারসেনের জয়!

কুমারসেনের প্রবেশ

কুমার। শীঘ্র আমার অশ্ব প্রস্তুত করো।

৩। কবি, ধরো ধরো, একটা গান শিগগির।

বিপাশা।                                               গান

    তোমার আসন শূন্য আজি, হে বীর পূর্ণ করো,
ওই যে দেখি বসুন্ধরা কাঁপল থরোথরো।
বাজল তূর্য আকাশপথে
সূর্য আসেন অগ্নিরথে,
এই প্রভাতে দখিন হাতে বিজয়খড়্গ ধরো।
ধর্ম তোমার সহায়, তোমার সহায় বিশ্ববাণী।
অমর বীর্য সহায় তোমার, সহায় বজ্রপাণি।
দুর্গম পথ সগৌরবে
   তোমার চরণচিহ্ন লবে,
চিত্তে অভয়বর্ম তোমার, বক্ষে তাহাই পরো॥