প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
ভার্গব। বোধ হয় যেন তারা বিদেশী।
সুমিত্রা। ভগবান সূর্যের উদয়দিগন্ত দেশে দেশে। তাঁর দেশে বিদেশী কে আছে।
ভার্গব। অপরাধ নিয়ো না দেবি, আমরা কিন্তু কিছুদিন থেকে এখানে বিদেশীদের পথরোধ করেছি।
সুমিত্রা। তাহলে আমারও এখানে পথ রুদ্ধ হল।
ভার্গব। ক্ষমা করো, দেবি। তোমাকে বিপদ হতে রক্ষা করব আমরা, এমন চিন্তা করা আমাদের স্পর্ধা, এ আমাদের মোহ। দুর্বল বুদ্ধির অপরাধ নিয়ো না, যাত্রীদের কোনো বাধা ঘটবে না।
শিখরিণী। মা তপতী।
সুমিত্রা। কী শিখরিণী, তুমি যে এখানে?
শিখরিণী। আমার স্বামীকে ওরা মেরে ফেলেছে।
সুমিত্রা। সে কী কথা। তিনি যে সাধুপুরুষ ছিলেন, তাঁকে মারলে কেন।
শিখরিণী। যুবরাজ কোথায়, সেই সংবাদ তাঁর কাছ থেকে ওরা বের করতে চেষ্টা করেছিল। দেশে সবাই তাঁকে সত্যবাদী বলে জানত বলেই তাঁর এই বিপদ ঘটল। দেবি, আমি কিছুতেই সান্ত্বনা পাচ্ছি নে, আমাকে বুঝিয়ে বলো, সংসারে যাঁরা ধর্মকে প্রাণপণে মানেন, ধর্ম কেন তাঁদেরই এত দুঃখ দিয়ে মারেন।
সুমিত্রা। যাঁরা মরতে পেরেছেন তাঁরাই এ কথার তত্ত্ব জানেন। মৃত্যু দিয়ে যাঁরা সত্যকে পান তাঁদের জন্য শোক কোরো না।
শিখরিণী। শোক করব না মা, তিনি আমার মৃত্যুর ভয় ঘুচিয়ে দিয়ে গেছেন, আমাকে এই তাঁর শেষ দান। গ্রামের লোকেরা আমাকে বলেছে অভাগিনী; কী বুঝবে তারা! তিনি আমার স্বামী ছিলেন এই আমার পরম সৌভাগ্য।
সুমিত্রা। যারা তাঁকে মেরেছে, মৃত্যুর দ্বারা তাদের তিনি জয় করেছেন, সে কথা তারা কোনোদিন বুঝবে না এইটেই সকলের চেয়ে শোকের কথা। কিন্তু বৎসে, তুমি এখানে এসেছ কেন।
শিখরিণী। এখানে তোমার চরণতলে যদি আশ্রয় নিতে পারতুম তা হলে বেঁচে যেতুম। কিন্ত মা, সংসারের আলো নিবলে তবুও সংসার থাকে। আমার মেয়েটি আছে— অমন পিতার কোল হারিয়েছে, তার কল্যাণের জন্যেই সেই অন্ধকারায় আমাকে থাকতে হবে। তারই জন্যে তোমার কাছে এসেছি।
সুমিত্রা। বলো, আমাকে কী করতে হবে।
শিখরিণী। এই অলংকারগুলি এনেছি দেবমন্দিরে রক্ষা করবার জন্যে। আমার মায়ের কাছ থেকে আমি পেয়েছি, আমার কন্যার জন্যে রাখব। যে পরিবারের ’পরে চন্দ্রসেনের বিদ্বেষ, জালন্ধরের সৈন্য দিয়ে তাদের সর্বস্ব লুঠ করাচ্ছেন। এই লও মা, তোমার স্পর্শ লাভ করুক— আমার মেয়ের দেহ পবিত্র হবে।
কুঞ্জলাল। আজ বাহিরের কোথাও আমাদের দুঃখের পরিত্রাণ নেই দেবি, কিন্তু মনে হয় যেন অন্তরে অন্তরে তুমি সেই দুঃখকে নাশ করতে পার,তাই এসেছি।
সুমিত্রা। বলো বৎস, তোমার কী বলবার আছে।
কুঞ্জলাল। যে নগরীতে তোমার মাতামহীর জন্মভূমি সেই উদয়পুর এতদিন চন্দ্রসেনকে অস্বীকার করে স্বতন্ত্র ছিল।