বিদায়-অভিশাপ
বিনয়ে কহিলে, ‘অসিয়াছি তব দ্বারে
তোমার পিতার কাছে শিষ্য হইবারে
আমি বৃহস্পতিসুত।’
কচ
।
শঙ্কা ছিল মনে,
পাছে দানবের গুরু
স্বর্গের ব্রাহ্মণে
দেন ফিরাইয়া।
দেবযানী
।
আমি গেনু তাঁর কাছে।
হাসিয়া কহিনু, ‘পিতা, ভিক্ষা এক আছে
চরণে তোমার।’ স্নেহে বসাইয়া পাশে
শিরে মোর দিয়ে হাত শান্ত মৃদু ভাষে
কহিলেন, ‘কিছু নাহি অদেয় তোমারে।’
কহিলাম, ‘বৃহস্পতিপুত্র তব দ্বারে
এসেছেন, শিষ্য করি লহো তুমি তাঁরে
এ মিনতি। ’ সে আজিকে হল কত কাল,
তবু মনে হয় যেন সেদিন সকাল।
কচ।
ঈর্ষাভরে তিনবার দৈত্যগণ মোরে
করিয়াছে বধ, তুমি দেবী দয়া করে
ফিরায়ে দিয়েছ মোর প্রাণ, সেই কথা
হৃদয়ে জাগায়ে রবে চিরকৃতজ্ঞতা।
দেবযানী। কৃতজ্ঞতা! ভুলে যেয়ো, কোনো দুঃখ নাই।
উপকার যা করেছি হয়ে যাক ছাই—
নাহি
চাই দান-প্রতিদান। সুখস্মৃতি
নাহি কিছু মনে? যদি আনন্দের গীতি
কোনোদিন বেজে থাকে অন্তরে বাহিরে,
যদি কোনো সন্ধ্যাবেলা বেণুমতীতীরে
অধ্যয়ন-অবসরে বসি পুষ্পবনে
অপূর্ব পুলকরাশি জেগে থাকে মনে;
ফুলের সৌরভসম হৃদয়-উচ্ছ্বাস
ব্যাপ্ত করে দিয়ে থাকে সায়াহ্ন-আকাশ,
ফুটন্ত নিকুঞ্জতল, সেই সুখকথা
মনে রেখো—দূর হয়ে যাক কৃতজ্ঞতা।
যদি, সখা, হেথা কেহ গেয়ে থাকে গান