ডুব দেওয়া

জগৎকে কখন্‌ মিথ্যা মনে করিতে পারি না, যখন জগৎকে ভালবাসি! একজন যে-সে লোক মরিয়া গেলে আমরা সহজেই মনে করিতে পারি যে, এ লোকটা একেবারে ধ্বংস হইয়া গেল, কারণ সে আমার নিকট এত ক্ষুদ্র! কিন্তু একজন প্রিয় ব্যক্তির মরণে আমাদের মনে হয় এ কখনো মরিতে পারে না। কারণ তাহার মধ্যে আমরা অসীমতা দেখিতে পাইয়াছি। যাহাকে এত বেশী ভালবাসিয়াছি সে কি একেবারে “ নাই “ হইয়া যাইতে পারে! সে ত কম লোক নয়! তাহাকে যতখানি হৃদয় দিয়াছি ততখানিই সে গ্রহণ করিয়াছে, তাহার উপরে যতই আশা স্থাপন করিয়াছি ততই আশা ফুরায় নি, রজ্জুবদ্ধ লৌহখণ্ডের মত আমার সমস্তটা তাহার মধ্যে ফেলিয়া মাপিতে চেষ্টা করিয়াছি—তাহার তল পাই নাই। যাহার নিকট হইতে সীমা যতদূরে তাহার নিকট হইতে মৃত্যুও ততদূরে। অতএব এতখানি বিশালতার এক মুহূর্তের মধ্যে সর্বতোভাবে অন্তর্ধান এ কখনো সম্ভবপর নহে। প্রেম আমাদের হৃদয়ের ভিতর হইতে এই কথা বলিতেছে, তর্ক যাহা বলে বলুক। অতএব দেখা যাইতেছে, প্রেম আসিয়াই আমাদের শিক্ষা দেয় এ জগৎ সত্য এবং প্রেমই বলে সত্য উপরে ভাসিতেছে না, সত্য ইহার অভ্যন্তরে নিহিত আছে। যাহা হউক পথ দেখিতে পাইলাম, আশা জন্মিতেছে ক্রমে তাহাকে পাইতেও পারি। ইহাকে অবিশ্বাস করিয়া মরণকে বিশ্বাস করিলে কি সুখ! হৃদয়ের সভ্যতার যতই উন্নতি হইবে এই মরণের প্রতি বিশ্বাস ততই চলিয়া যাইবে, জীবনের প্রতি বিশ্বাস ততই বাড়িবে।


ভাল ক’রে পড়িব এ জগতের লেখা।
শুধু এ অক্ষর দেখে করিব না ঘৃণা।
লোক হ’তে লোকান্তরে ভ্রমিতে ভ্রমিতে,
একে একে জগতের পৃষ্ঠা উলটিয়া
ক্রমে যুগে যুগে হবে জ্ঞানের বিস্তার!
বিশ্বের যথার্থ রূপ কে পায় দেখিতে!
আঁখি মেলি চারি দিকে করিব ভ্রমণ,
ভালবেসে চাহিব এ জগতের পানে,
তবে ত দেখিতে পাব স্বরূপ ইহার!